ভার্জিলিও পিনেরার পাঁচটি গল্প
বাংলা ভাষান্তর: নাহার তৃণা
অনিদ্রা
লোকটা সেদিন বেশ তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আসে না। ঘুমের আশায় বার বার এপাশ-ওপাশ করে। তাতে বিছানার দফারফাই সার, ঘুম নাগালের বাইরেই থেকে যায়। লোকটা উঠে একটা সিগারেট ধরায়। বই নিয়ে খানিক পড়বার চেষ্টা করে। নাহ্ মন বসাতে ব্যর্থ হয়। আবার বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম তার নাগালের বাইরেই থেকে যায়। রাত যখন তিনটে, তখন সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। পাশের ঘরে ঘুমে ডুবে থাকা বন্ধুকে উঠিয়ে নিজের ঘুমহীনতার কথা বলে। বন্ধুর পরামর্শ চায়। বন্ধু পরামর্শ দেয় সে যেন বাইরে গিয়ে খানিক হাঁটাহাঁটি করে আসে। তাতে শরীর ক্লান্ত হবে। এরপর এককাপ লেবু চা খেয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেই হবে; ঘুম আসবে। বন্ধুর কথা মতো পইপই করে সব কাজ করে। কিন্তু তাতেও ঘুম বশ মানে না। আবার সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। এবার লোকটা ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার যথারীতি একগাদা উপদেশ ঝাড়েন। কিন্তু সেসবও কাজে দেয় না। ভোর ছটার দিকে পিস্তলে গুলি ভরে সে তার কপাল বরাবর চালিয়ে দেয়। লোকটা মারা যায়। মৃত্যু তাকে কোলে টেনে নিলেও ঘুম তার অধরাই থেকে যায়। অনিদ্রা একটা ভয়াবহ অবস্হার নাম।
মূল গল্প: INSOMNIA [1956] by Virgilio Pi-era Translations by Daniel W. Koon
পাহাড়
পাহাড়টা প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচু। সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাহাড়টাকে একটু একটু করে কামড়ে খেয়ে ফেলবো। পাহাড়টা আর দশটা পাহাড়ের মতোই; গাছপালা, পাথর, মাটি, পশুপ্রাণী, এমনকি মানুষও এর ঢাল বেয়ে ওঠা-নামা করে। প্রতিদিন সকালে আমি পাহাড়টার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি এবং আমার চলার পথের সামনে যা পাই তা চিবানো শুরু করি। চর্বণের কাজে কয়েক ঘন্টা কেটে যায়। অবসন্ন শরীর আর ফুলে ওঠা চোয়াল নিয়ে আমি বাড়ি ফিরে আসি। অল্প বিশ্রাম নিয়ে এরপর আমি দরজার কাছে বসে দূরের নীল দিগন্তের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকি। আমার কর্মকাণ্ডের কথা যদি প্রতিবেশিকে বলি তবে নিশ্চিত, আমার নির্বুদ্ধিতা নিয়ে হেসে মরবে এবং আমাকে পাগল ঠাওরাবে। নিজের কর্ম বিষয়ে সচেতন বলেই বুঝতে পারছি, দিন দিন পাহাড়টা কেমন উচ্চতা আর ওজন হারাচ্ছে। অবস্হা এমন দাঁড়িয়েছে, খুব শিগগিরই হয়ত পাহাড়ের এই ক্ষয়কে ভূতাত্ত্বিক সমস্যা চিহ্নিত করে প্রকৃতিকে দোষারূপ করা শুরু হবে। আর সেটাই আমার জন্য মর্মান্তিক: কেউই একথা স্বীকার করবে না বা জানবে না যে আমিই ছিলাম তিন হাজার ফুট আজদাহা ওই পাহাড়টার ভক্ষক!
মূল গল্প: THE MOUNTAIN [1957] by Virgilio Pi-era Translations by Daniel W. Koon
সাঁতার
আমি সাঁতার শিখেছি ডাঙ্গায়। মনে হয়েছে জলের চেয়ে শুকনো জায়গায় সাঁতার শেখাই শ্রেয়। যেহেতু আপনি ইতোমধ্যে তলদেশে আছেন, ডুবে যাবার কোনো ভয় নেই। একই যুক্তিতে আপনি তো আসলে ইতোমধ্যে ডুবেই গেছেন। কোনোভাবে উজ্জ্বল বাতি কিংবা দিনের আলোর ঝলকানির শিকার হবারও শঙ্কা নেই আপনার। সবচেয়ে বড় কথা শরীরে জল ঢুকে ফুলে যাবার ভয় নেই।
আমি অস্বীকার করছি না যে শুকনো ডাঙ্গায় সাঁতার শেখার দৃশ্যটা মৃত্যুযন্ত্রণার ছটফটানির মতো লাগে। প্রথম দর্শনে কেউ ভাবতে পারে যে আপনি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। তবু এটা একেবারেই আলাদা একটা ব্যাপার। একই সাথে আপনি জীবিত আছেন, সতর্ক আছেন, জানালা দিয়ে ভেসে আসা সঙ্গীত সুধা উপভোগ করছেন এবং মাটিতে হামাগুড়ি দেয়া পোকাটিকেও দেখতে পাচ্ছেন।
প্রথম দিকে আমার বন্ধুরা আমার এই কাজটিতে সায় দেয়নি। তারা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে থাকতো এবং আমাকে নিয়ে গোপনে দুঃখ পেতো। ভাগ্যক্রমে সেই সংকট কেটে গেছে। এখন তারা জানে আমি ডাঙ্গায় সাঁতার কাটতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। মাঝে মাঝে আমি মার্বেল টাইলসে হাত ডোবাই এবং গভীর তলদেশে আটকে থাকা ছোট ছোট মাছ ধরে বন্ধুদের হাতে দেই।
মূল গল্প: SWIMMING[1957] by Virgilio Pi-era Translations by Daniel W. Koon
পতন
আমরা তিন হাজার ফুট উঁচু একটা পাহাড়ে উঠেছিলাম। পাহাড় চূড়ায় নিজেদের উপস্হিতির কোনো স্বাক্ষর পোঁতার তাগিদে কিংবা কোনো দুঃসাহসী আলপাইন পর্বতারোহীর পতাকা ওড়াতে যাইনি। স্রেফ খেয়ালের বশে যাওয়া। ওখানে কয়েক মিনিট কাটানোর পর আমরা নামতে শুরু করি। আমার সঙ্গীও আমাকে অনুসরণ করে নামতে থাকে। এরকম অবস্থায় যা হয়ে থাকে- আমরা দুজনই একই দড়িতে বাঁধা, দড়িটা আমার কোমরে ঝোলানো আঙটার সাথে যুক্ত। আটান্নব্বই ফুট নামার পর হঠাৎ করে আমার সঙ্গীর পা পাথরে হড়কে যায় এবং সে ভারসাম্য হারিয়ে ডিগবাজী খেয়ে আমার সামনে এসে ঝুলতে থাকে। যেহেতু দড়িটা আমার দুই পায়ের মাঝখান বরাবর আঘাত করেছে এটা আমাকে কঠিনভাবে ঝাঁকুনি দিলো। পাহাড়ের কিনারা থেকে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে আমি মোচড় খেয়ে শরীরটা পেছনের দিকে নিয়ে ভারসাম্য রাখলাম এবং সে ঝুলতে ঝুলতে এসে আমার আগের জায়গাটা দখল করলো। ব্যাপারটা হাস্যকর বা অসম্ভব কিছু নয়। পরিস্হিতি সামাল দিতেই তাকে ওরকমটা করতে হয়েছিল; এটা হলো সেরকম একটা পরিস্থিতি যা এখনো পর্বতারোহীদের ম্যানুয়ালে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
গতির প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে সঙ্গী নিজের অবস্হানে কিছুটা সামঞ্জস্য আনতে সক্ষম হয়, কিছু সময় পর দেখতে পেলাম সে আমার দুই পায়ের মাঝ দিয়ে উল্কাবেগে নীচে নেমে গেল, যেহেতু সে আর আমি একই দড়িতে বাঁধা, না চাইলেও আমাকেও সেই ধাবমান গতির সঙ্গে নেমে যেতে হলো, প্রকৃতির রীতি মোতাবেক প্রথমদিকে সে দ্রুত নীচে নেমে গিয়েছিল, কিছুক্ষণ পর তার সেই গতিবেগ বাতাসের ধমকে কমতে থাকে। ফলে আমরা দুজনে মুখোমুখি চলে আসি। এই পরিস্হিতিতে আমরা একটা কথাও বলিনি। দুজনেরই জানা ছিল অচিরেই হুড়মুড়িয়ে আমাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঠিকই আমরা নীচের দিকে পড়তে শুরু করলাম। এই পতন ঠেকানোর সাধ্য আমাদের দুজনের কারোই ছিল না। কিন্তু এই অনিবার্য পতনের ভয়াবহতা থেকে নিজের চোখ জোড়া রক্ষার সর্বাত্মক তাগিদে আমি ব্যাকুল হয়ে উঠলাম।
মুখে প্রকাশ না করলেও সঙ্গীটিও যে তার দাড়ির চিন্তায় অস্হির সেটি বুঝতে বাকি থাকলো না। কারণ দাড়ির বিষয়ে সে বরাবরই ভীষণ যত্নশীল- সে চাইবেই তার গথিক গ্লাসের মতো ঝকঝকে ধূসর দাড়িতে বিন্দুমাত্র ময়লাও যেন না লাগে। কাজেই নিজেদের প্রিয় জিনিসের সর্বাত্মক নিরাপত্তার তাগিদে আমার হাত দিয়ে সঙ্গীর দাড়ি, এবং সে তার হাত দিয়ে আমার চোখ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টায় লেগে গেলাম। এদিকে নীচের দিকে আমাদের পতনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আচমকা সঙ্গীর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম একটা ভীষণ ধারালো পাথরের ব্লেড তার মাথার ঠিক ওপরে খাড়া হয়ে আছে। ঠিক তারপরেই আমি দেখে বেকুব হয়ে গেলাম যে আরেকটা ধারালো পাথর আমার পা দুটোকে কোমর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এই পাথরটা পাহাড়ের গা থেকে সামুদ্রিক জাহাজ কাটার করাতের মতো এমন ধারালো হয়ে বেরিয়ে এসেছিল যার স্পর্শমাত্র যে কোনো বস্তু কাটা পড়তে বাধ্য।
একজন আরেকজনের দাড়ি আর চোখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করতে লক্ষ করলাম প্রতি পঞ্চাশ ফুট বা তারও বেশি অন্তর অন্তর আমাদের একটি করে অঙ্গের হানি ঘটে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এরকম পাঁচটি বিরতিতে আমি আর আমার সঙ্গী যা হারালাম তা হচ্ছে: সঙ্গী তার বাঁ-কান, ডান কনুই, একটি পা( কোন পা সেটা মনে নেই), অণ্ডকোষ এবং নাক হারায়; অন্যদিকে আমি হারাই বুকের পাঁজর, মেরুদণ্ড, বাঁ-ভ্রু, বাঁ-কান আর গলার শিরা। কিন্তু এর পরপরই যা ঘটলো সে তুলনায় ওসব অঙ্গহানি কিছুই নয়।
মাটি স্পর্শের আগে সমতল থেকে আমাদের অবস্হান যখন প্রায় এক হাজার ফুট উচ্চতায়, তখন আমার অক্ষত অঙ্গের মধ্যে বাকি ছিল: দুই হাত(শুধুমাত্র কব্জির অংশ), দুই চোখ অন্যদিকে সঙ্গীর অবশিষ্ট ছিল দুই হাত(শুধু মাত্র কব্জি) এবং তার সাধের দাড়ি। দুজনের মনেই একই আশঙ্কা কাজ করছিল যদি পাথরের আঘাতে আমাদের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়? তখনও আমাদের পতন চলমান। চূড়ান্ত পতনের যখন আর মাত্র ফুট দশেক বাকি, তখন পাহাড়ে কাজ করে যাওয়া কোনো কর্মীর ভুলবশত রেখে যাওয়া পিলারের ধাক্কায় সঙ্গীর হাত দুটোর ভাসান ঘটলো, একই সঙ্গে আমার চোখ হারালো তার নিরাপত্তার আশ্রয়।
এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য হজম করে অন্যের উপকারে অটল থাকা কঠিন, অস্বীকার করবো না স্বার্থপরের মতো আমি তাই সঙ্গীর দাড়ি রক্ষার তাগিদ ভুলে নিজের অরক্ষিত চোখ দুটো রক্ষায় মরিয়া হয়ে নিজের হাত দুটো দিয়ে দুচোখ ঢাকলাম। কর্মের ফল হাতেনাতে পেয়েও গেলাম। এবার একই রকম পিলারের ধাক্কায় আমার হাত দুটো উড়ে গেল। এতক্ষণ আমরা দুজন একসাথে পড়তে থাকলেও এই প্রথম আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।
তবে এটা নিয়ে আমি বিশেষ আফসোস বা অভিযোগ করি না। কারণ আমার চোখ দুটো শেষমেশ নিরাপদে আলগোছে ঘাসের ওপর নেমে এসেছে। সে চোখ দিয়ে দেখতে পাই খানিক দূরে আমার সঙ্গীর চমৎকার ধূসর দাড়িগুলো মাটির ওপর পড়ে ঝকমক করছে।
মূলগল্প: The Fall(1944) by Virgilio Pi-era Translations by Mark Schafer
জাহান্নাম
ছোটো বেলায় মা-বাবার মুখেশোনা ‘জাহান্নাম’ শব্দটাকে শয়তান সাদৃশ্য ভাবনা ছাড়া অন্যকিছু মনে হতো না। এরপর শৈশব পেরিয়ে যখন আরেকটু বড় হলাম, নরক যন্ত্রণাময় অনন্ত দিনরাতের এপাশ-ওপাশের অভিজ্ঞতায় জাহান্নাম সম্পর্কিত ধারণায় জটিলতার রঙ চড়তে শুরু করে। বয়স বেড়ে আরো পরিণত হওয়ার পর, এক সময় এই যুক্তিতে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা ছেড়ে দিলাম, মনুষ্য চেহারায় শয়তানের ছাপ বসে গেছে। এই বোধটা আমাদের জাহান্নাম বিষয়ক যন্ত্রণাময় ভাবনাকে দূরে হটিয়ে দেয়। বৃদ্ধ বয়সে জাহান্নাম নাগালের মধ্যে চলে আসায়, নিজেদের স্বার্থে সেটাকে আমরা মন্দেরভালো জাতীয় কিছু একটা ভেবে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, অবশ্য মাঝেমধ্যে চিন্তাগ্রস্তও হতে হয় বৈকি। এরপর বয়সটা এমন স্তরে পৌঁছায়, যখন জাহান্নামের আগুনে বসেই হাসিকান্নার মহড়ায় দিয়ে যেতে হয়; আর যন্ত্রণাময় অবস্হাটা মানিয়ে নেবার জন্য ‘সবই সম্ভব’ এ-ভাবনায় নিজেদের প্রবোধ দিতে হয়। জাহান্নামের আগুনে পুড়তে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। দীর্ঘ একহাজার বছর পর, আঁধারমুখো শয়তান আমাদের প্রশ্ন করে- আমরা কেন এমন ভোগান্তি নিরন্তর সহ্য করছি। তার উত্তরে আমরা বলি, এটা ভোগান্তির চেয়েও অভ্যস্ততার ব্যাপার। শেষমেশ একদিন ছুটির ঘন্টা বাজে, কিন্তু এতদিনের অভ্যস্ততা ঠেলে, জলন্ত অগ্নিকুণ্ড ছেড়ে- অন্য কোথাও-অন্য কোনোখানে যাওয়াটাকে আমরা প্রত্যাখান করি। কেননা এতদিনে আমরা অভ্যাসের দাসত্ব মেনে নিয়েছি। দীর্ঘে দিনের অভ্যস্ততার মায়া কেইবা ছাড়তে চায়?
মূলগল্প: Hell(1956) by Virgilio Pi-era Translations by Mark Schafer
লেখক পরিচিতি:
ভার্জিলিও পিনেরা(Virgilio Pi-era) কিউবার কারদেনাসে ৪ আগস্ট ১৯১২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কারদেনাস শিক্ষাবোর্ডের সেক্রেটারি হিসেবে প্রথম জীবনে কাজ করেন। পরে কারদেনাস একোইডাক্ট(aqueduct) বিভাগের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। ১৯২৩ সালে তাঁরা সপরিবারে হাভানায় বসবাস শুরু করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর লেখালিখির সূচনা হয়। প্রথম কবিতা এল গ্রিটো মুডো El Grito Mudo (The Mute Scream) ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ সালে প্রথম রচিত নাটক ক্ল্যামার এন এল পেনাল(Clamor en el Penal (Noise in the Penitentiary)। এই নাটক রচনার মধ্যে দিয়ে দর্শনশাস্ত্রে ডিগ্রীধারী পিনেরা পুরোদস্তুর লেখক জীবনে প্রবেশ করেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা সৃষ্টি হলো ‘লা ইসলা এন পেসো’ La isla en peso (The Island in Weight) ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর অন্যান্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে সাহিত্য সম্পর্কিত প্রবন্ধগুচ্ছ, সাহিত্য সমালোচনা। ছোটো গল্পের সংকলন যা ‘কোল্ডটেলস’ শিরোনামে পরিচিত, এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। পিনেরা অসংখ্য নাটক রচনা করেন। যার অনেকগুলোই দর্শকের সমাদর পেয়েছিল। তাঁর গল্পে উদ্ভট আর অলৌকিক ব্যাপারের কেমন একটা মেলবন্ধন চোখে পড়ে যা কাফকাসুলভ বলে বোদ্ধাদের মতামত। পিনেরার অনুবাদিত সাহিত্য সৃষ্টি বিংশ শতকের স্বৈরশাসন ব্যবস্হার বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের খতিয়ান হিসেবে পাঠকের সামনে উপস্হিত হচ্ছে। সমাজ-রাজনীতি সচেতন এই গুণী মানুষটি ১৯৭৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাভানায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।