আলেকজান্ডার পুশকিনের তিনটি কবিতা। ভাষান্তরঃ বেনজামিন রিয়াজী

0
Showing 1 of 1

চাদায়েভ এর প্রতি

যৌবনের বৃথা আশা বেশী দিন আমাদের টানেনি ভ্রান্তিতে,
প্রেম আর গৌরবিত সুখ্যাতির সপ্নগুলো তার।
তারা সংক্ষেপেই, ক্ষণকাল পিছু নিতো আমাদের সাথে,
তারপর চলে যেতো কুয়াশার মতো কভু ফিরতো না আর।

কিন্তু আজো ক্রুদ্ধ হই, হৃদপিণ্ড জ্বলে অগ্নিময় ,
স্বৈরশাসনতন্ত্রী জোয়ালের নীচে,
এবং সতর্কতায় স্বদেশের সুমঙ্গল যেচে,
এই দেশমাতৃকার সত্যিকার মুক্তি কামনায়।

আমরা প্রতীক্ষা করি মুক্তির, সয়ে যাই যত সব জ্বরের উত্তাপ,
যেভাবে তারুণ্যদীপ্ত ব্যাকুল প্রেমিকগণ গোপনে হজম করে ব্যথা
মিলনের স্বর্গসুধা পাবার আগের ক্ষণে যেই অধীরতা
বুকে চেপে সয়ে যায় অপেক্ষার সকল প্রতাপ।

যদি মুক্তির জ্বলন্ত শিখা রয়েছেই আমাদের বুকের খাঁচায়,
চালিত যখন আমরা মহিমার কন্ঠের আহ্বানে,
রাশিয়ার তরে, কমরেড, চলো যাই মহাআত্মদানে,
উৎসর্গ করি প্রাণ শৌর্য-বীর্যে পূর্ণভাবে এক হয়ে অবিভক্ততায়।

প্রিয় বন্ধু, আস্থা রেখো: ক্রমশই জেগে ওঠা এই আকাশেরা
পূর্বাভাস দেয় এক অত্যাশ্চর্য প্রত্যুষের সূচনা — রাশিয়া
সুনিশ্চিত জেগে উঠবে যুগান্ত-প্রাচীন ঘুম ভেঙ্গে আত্মহারা,
এবং স্বৈরতন্ত্র অসহিষ্ণু চূর্ণ করে, সেই
ধ্বংসাবশেষ জুড়ে আমাদের নাম হবে ক্ষোদিত অক্ষর দিয়ে গড়া।

Pyotr Yakovlevich Chaadayev (1794 -1856) ছিলেন রাশিয়ান দার্শনিক । চাদায়াভ ফরাসী ভাষায় রাশিয়ার বিষয়ে আটটি “দার্শনিক পত্র” লিখেছিলেন,যা বহু বছর ধরে পাণ্ডুলিপি আকারে রাশিয়ার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল। যেখানে ইউরোপের অর্জনসমূহ বিশেষত যুক্তিবাদী ও যৌক্তিক চিন্তায়, এর প্রগতিশীল চেতনা, বিজ্ঞানের নেতৃত্ব এবং প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্বের প্রশংসা করেছিলেন।রাশিয়ান সরকার তার ধারণাগুলি বিপজ্জনক হিসাবে দেখেছিল ফলে সেগুলি সেন্সর প্রক্রিয়া দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাকে অভিযুক্ত করার মতো কিছুই না থাকায় চাদায়াভকে আইনত উন্মাদ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

কয়েদি

বন্দী এক, অন্ধকূপে বাস করি একা,
কয়েদির কুঠুরিতে কবরস্থ স্তব্ধতা ও তমসায় ঢাকা।
বাইরের মুক্তাঙ্গনে, বন্যতায়, প্রমত্ত খেলায়,
কমরেড আমার, এক বাজপাখি, ধরেছে শিকার তার সুতীক্ষ্ণ থাবায়।

অতঃপর, ছেড়ে সেটি, তাকায় আমার দিকে এমন ভঙ্গিতে
যেন সে ভাবনা আর অভিপ্রায়ে একাত্ম আমারই একসাথে।
তাকায় আমার দিকে এভাবেই, চিৎকার করে সে কান্নায়।
” এইতো সময়,” বলছে সে, “এখান থেকেই আমরা চলো উড়ে যাই!

“দুজনেই আবদ্ধ আমরা মুক্তি-পরিণয়ে, তাই চলো যাই দূরে
যেখানে নিঃসঙ্গ ঝোড়ো মেঘগুলো নির্ভয়ে পথভোলা ঘোরে,
উত্তাল সমুদ্র যেথা ছুটে চলে বল্গাহীন আকাশের সাথে মিশে যেতে,
যেখানে সাহসী হয় একমাত্র বাতাসেরা আর আমি যেতে অনিশ্চিতে! ..”

রাত্রি

প্রেম থেকে উৎসারিত আকুলতা আর কোমলতাভরা আমার কন্ঠের সুরবাণী
ভেঙ্গে দেয় রাত্রির স্বপ্নিল নীরবতা… বিছানার পাশে জ্বলা পাণ্ডুর মোমবাতিখানি
গলে গলে ক্ষয়ে যায়…আমার হৃদয় হতে নিঃসরিত তরঙ্গ দোলায়
ত্বরিত কবিতারাশি, প্রেমের প্রবল স্রোত, গুঞ্জরণ তোলে, গান গায় আর মিশে যায়
আর ছুটে চলে,পরিপূর্ণ তোমাতেই ভরা, উপচে পড়া উচ্ছ্বাসে প্লাবিত।
মনে হয় দেখি যেন তোমার দুচোখ, যারা অন্ধকার জুড়ে ঝলসিত,
মিশে যায় আমার দুচোখে… তোমার হাসিটি দেখি… একাকী আমার সাথে কথা বলো তুমি:
বন্ধু মোর, প্রিয়তমা সখি… ভালবাসি… আমি যে তোমার… শুধুই তোমার এই আমি।

বেনজামিন রিয়াজী: কবি, গল্পকার ও অনুবাদক।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য
Showing 1 of 1
Share.

Comments are closed.