হোর্হে ল্ইুস বোর্হেস প্যারাবল
ভাষান্তর: মাজহার জীবন
প্লট
সিজার। মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস। তাঁর হেফাজতকারী। এমনকি সন্তানের মতো। একটা ভাস্কর্যের পাদদেশে উদ্যত তলোয়ার হাতে তাঁরই বন্ধুদের কাছে বন্দী সিজার। সেসব মুখ আর ধারালো তলোয়ারের মাঝে ব্রুটাসকে দেখে তাঁর ভয় চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছালো। তাই নিজেকে আত্মরক্ষা থেকে তিনি বিরত হলেন এবং চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন, আহ, ব্রুটাস, তুমিও? শেক্সপিয়ার এবং কেভেদো এই মর্মন্তুদ কান্না লিপিবদ্ধ করেছেন।
ভাগ্য হলো পুনরাবৃত্তি, বৈচিত্র্য আর সামঞ্জস্যে অনুরক্ত। ঊনিশ শতক পরের ঘটনা। বুয়েন্স আয়ার্স প্রদেশের দক্ষিণের এক জায়গা। এক রাখাল কয়েকজন রাখালের আক্রমণের শিকার হলেন। তিনি মাটিতে পড়ে গিয়ে তাঁর নিজ ধর্মপুত্রকে দেখতে পেলেন। সামান্য বিস্ময় আর হালকা প্রতিবাদ করে তাকে বললেন (এ শব্দগুলো কেবল শোনার জন্য বলার জন্য না): কিন্তু! বালক! উহ। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, তিনি মারা যাচ্ছেন আর আরেকটা দৃশ্য আবারও মঞ্চস্থ হতে পারে।
সমস্যা
আসুন আমরা কল্পনা করি, আরবী হরফে লেখা একটা কাগজ টলেডোতে আবিষ্কার হলো। প্রাচীন হস্তলিপিবিদ জানালো এটি সিদে হেমেতে বেনেনজেলি’র লেখা, যে উৎস থেকে সার্ভান্তেস তাঁর ডন কিহোতে লিখেছেন। কাগজটা থেকে আমরা জানলাম, নায়ক (আমরা সবাই জানি, স্পেনের রাস্তায় রাস্তায় তলোয়ার আর বল্লম হাতে কারণে-অকারণে নায়ক যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানায় আর ঘুরে বেড়ায়) বুঝতে পারলো এক মারামারিতে সে একজনকে হত্যা করে ফেলেছে। এ রকম এক জায়গায় কাগজটি ছিঁড়ে গেছে। এখন সমস্যা হলো, এমতাবস্থায় ডন কিহোতের কি প্রতিক্রিয়া হলো তা ধারণা করা বা অনুমান করা।
এ বিষয়ে তিনটা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি আমি। প্রথমটা নেতিবাচক: তেমন বিশেষ কিছু ঘটেনি। কারণ ডন কিহোতের অলীক জগতে মৃত্যু যাদুর মতই অস্বাভাবিক কিছু না। আর ঠিক এ জন্যই, যে যুদ্ধ করে তার কাছে সামান্য এক মানুষ হত্যা কোনরকম বিরক্তির কারণ হতে পারে না। এমনকি সে ভাবতেই পারে, এ কোন তুচ্ছ জীব বা জাদুকরের সাথে যুদ্ধ।
দ্বিতীয়টা মর্মান্তিক: ডন কিহোতে কোনভাবেই ভুলতে পারেনি যে, সে কল্পকাহিনির আলোনসো কুইজানো’র প্রতিরূপ ও তারই বহি:প্রকাশ। মৃত্যু দৃশ্য দেখে সে বুঝতে পারে যে একটা বিভ্রম তাকে কাবিলের মতো পাপ করতে প্রলুব্ধ করেছে। এর ফলে সে তার ইচ্ছাকৃত পাগলামো থেকে সম্ভবত চিরদিনের জন্য বের হয়ে আসে।
তৃতীয়টা সম্ভবত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য: লোকটাকে হত্যার পর ডন কিহোতে এ ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি যে, এই ভয়ঙ্কর ঘটনা নিছক প্রবল একটা মানসিক উত্তেজনার ফল ছিল। বাস্তবতার ফল তাকে বাস্তবতার কারণ সম্পর্কে ধারনা করতে শিখিয়েছে। আর ডন কিহোতে কখনোই তার এই পাগলামো থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
তবে আরেকটা হাইপোথিসিস হলো, যা স্পেনীয়দের মনোস্তত্ত্বের কাছে অপরিচিত (পশ্চিমা মনোস্তত্ত্বের কাছেও) যার জন্য প্রয়োজন আরো প্রাচীন, আরো জটিল এবং আরো কালজীর্ণ পরিবেশ। তখন ডন কিহোতে আর ডন কিহোতে নাই বরং হিন্দুস্থান কালচক্রের একজন রাজা। সে তার শত্রুর শরীরের উপর দাঁড়িয়ে আছে যেন হত্যা আর বিপন্নতা ঈশ্বরের কিংবা যাদুর ব্যাপার। কিন্তু সবাই জানে সেটা মানুষের লোকোত্তর অবস্থা। সে জানতো মৃত্যু হলো মায়া। যেমনটি হাতে তার উদ্যত রক্তাক্ত তলোয়ার, সে নিজে, তার পুরো অতীত জীবন, শত শত দেবদেবী আর মহাজগতও মায়া।
বাংলা অনুবাদ এন্ড্রু হার্লির স্পেনিশ থেকে ইংরেজি অনুবাদ থেকে করা হয়েছে।