অমানুষ
এক সার্কাসকর্মী
ফাঁকা মাঠে তুলেছে একটা ঘর
আর চিৎকার করছে…
এই ঘরে অমানুষ আছে
অমানুষ আছে
অমানুষ…
তাকে কেন্দ্র করে অনেক লোকের ভিড়
একে একে ঢুকছে ঘরে সাক্ষাতের জন্য—
ফিরছে কালিমুখে সকলেই।
কৌতূহলবশত আমিও গেলাম;
ফাঁকা ঘর
চারপাশে আয়নার দেয়াল
আমি— আমারই অবয়ব।
মহাজনের ব্লাডব্যাংক
সামনে হলুদ ভুঁই— এপাশে পুকুর
ধার ঘেঁষে মাচায় ফুটে আছে পটল ফুল
ওপাশে ধান ক্ষেত— একটা কাকতাড়ুয়া
বর্গাচাষির দিকে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে…
আর ফসলের গায়ে লেগে থাকা বর্গাচাষির নিষ্পাপ ঘাম ও রক্ত
জমা হয় মহাজনের ব্লাডব্যাংকে…
আলতা
পৃথিবীর এই অদ্ভুৎ সুন্দর কোমল পা’জোড়ার
আল্পনাজুড়ে গাঢ় আলতার রঙ নিখোঁজ হয়েছে!
কোথায় পাওয়া যায় একটু লাল রক্ত?
বেদেনা বা ডালিমের রসালো দানা, পাকা পুঁইফল
আরও যত ভেষজ রক্তিম রঙ থাকতে পারে
কোনো কিছু দিয়েই হয় না কিছু!
সিঁদুরের কৌটো নেই, আতরের বোতল নেই
তবুও পাজোড়া জলে চুবানোর আগে
শরীরটাকে স্নান করাতে খুব জরুরি
আলতাজলের একটি আস্ত পুকুর…
তাই সর্বাঙ্গে রক্ত ঝরাতে ঝরাতে ঝাপ দিলাম বগার ফাঁদ পুকুরে…
পচন পাতার ঘ্রাণ/পাঁচই ভাদ্র চোদ্দোশো সাতাশ
সবুজ মাচায় ফুটে থাকে নীরব শাদা পটল ফুল
আকাশের নিচে নারী ও পুরুষ ফুলেরা কী দারুণ
উচ্ছন্ন-সঙ্গম সংগীত শুনে শুনে
শরীর ও হৃদয়ে লতা প্যাঁচিয়ে মিশে যায় একাকার।
গেরস্ত ও গেরস্তিনি এসব সবুজের নিচে চাষেবাসে
জন্ম দেয় যে রূপান্তর— সবুজ সন্তান ;
তাদের ছোট ছোট আঙুলেরা কেমন সুন্দর আঁকড়ে ধরে বড় আঙুল,
আঙুলের ডগায় চকচকা রোদে ঘাম বিন্দুর মতো হাসে
পৃথিবীর সমস্ত ফসলের মাঠ।
চোর
ঘরে একটি চোরকে লুকিয়ে রাখি,
সে আমার অতিপ্রিয় মন চোর।
তাকে আনন্দে খাবার দিই, ঘুম পাড়াই, চান করাই…
আদরে আদরে সকল খেয়াল রাখি
সারাক্ষণ মন জুগিয়ে চলি।
তবুও সে
ঘর চুরি করে
আমাকে ছুরি মেরে
একটি জীবিত লাশ কাঁধে করে পালিয়ে যায় নিঃশব্দে!
কালো ছাগল ও নিম গাছের কবিতা
একটি কালো ছাগল, মানুষের মতো যে হাত দিয়ে
গা চুলকাতে পারে না
অথচ তারও গা চুলকায়!
চুলকালে বেচারা নিম গাছটায় গা ঘষে,
নিজেকে ঘষে ঘষে আরাম পায় খুব।
নিম গাছের গুনাগুন ছাগলের ওলান বেয়ে ঝরে…
কবি আর নবী
কবি হওয়া ভীষণ পাপ
নবী হওয়া পূণ্য
কবি আর নবী
পাপ আর পূণ্য…
রাজশাহীতে ৩১ মে ২০২৪ ভাঁটফুলসূত্র আয়োজিত ‘হিরণ্ময় ডানার বিস্তার’ শীর্ষক পাঁচ কবির কবিতাপ্রহরে পঠিত কবিতা।