কবিতা
মাজহার জীবন
রহস্য
এক চিলতে মোরগঝুটি রোদ
দৌড়ে পালাতে পালাতে
ক্লান্ত হয়ে যায়
অতঃপর
পাটখেত ছায়ায়
হেলান দিয়ে
জিরোতে জিরোতে
দিন শেষে
হেমন্তশিশির পান করে
ঢলে পড়ে
মৃত্যুর কোলে।
পরিত্যক্ত
বোশেখ বা সোনাঝরা কার্তিক-দুপুরে
ঘুঘুদেরও বুকে সহসা জেগে উঠে প্রেম
শিকারীর শর ভুলে সাথীকে ডেকে যায়
পালকে পালক লগ্ন হয়ে কাটায় যুথ-সময়
ঘুলঘুলি কিংবা বৃক্ষশাখা খুঁজে নেয় দুজনে
একেকটা খড় ঠোঁটে নিয়ে গড়ে তোলে নীড়
বুকের ওমে আগলে রাখে ভালবাসার ফসল
তারপর একদিন সকলে উড়ে চলে যায়
পড়ে থাকে কিছু ঝরাপালক, ডিমের খোলস
যেমনটি পড়ে আছি এইখানে একাকী আমি।
অভিমান
একদিন
খবর দিয়েই
পৌঁছে যাব
তোমার নিলয়
যদি দেখি
কপাট ভেজানো
কড়া না নেড়েই
নীরবে আসবো ফিরে
জানবে না কেউ
এ অপমান
তুমিও জানবে না
এ অভিমান।
হায়
এক পরিযায়ী হরিণ হাড়কাঁপা শীতে
একটু উষ্ণতার খোঁজে হরিণী ভেবে
ঢলে পড়লো তোমার কোলে
ও বুঝেইনি তুমি ছিলে তখন
ক্ষুধার্ত বাঘিনী।
দেখা
দেখো
সিঁড়ির কাধ ঘেষে
ঝুলে আছে
এক বর্ষা-মেঘ;
মেঘেদের আলতো সরিয়ে
আকাশ খুঁজছে
তোমার আঁচল
তুমি চুল খুলে বাইরে এসো
বৃষ্টির ফাঁক গলে
তোমাকে খুঁজে নেবে আকাশ
দেরি
সিগনালের জন্য আউটে অপেক্ষমান
ট্রেনে চড়ে স্টেশনে নামলাম
টিকেট কাটব বলে
টিকেট পেয়ে
ফিরে তাকাতেই দেখলাম-
হুইসেল দিয়ে
হুস হুস করে
বেরিয়ে গেল ট্রেনটা
সবকিছুতেই আমার কেবল দেরি হয়ে যায়!
আরেকটা টিকেট কেটে
অপেক্ষা করছি
পরের ট্রেনের জন্য
ওয়েটিং রুমে
ভাবছি এবারও দেরি হবে না তো!
তোমাকে ভুলতে ভুলতে
দিনমান
তোমাকে ভুলতে ভুলতে
কখন যে গোধূলীর
কোলে ঢলে পড়ি!
রাতভর
তোমাকে ভুলতে ভুলতে
কখন যে ঊষার আলোয়
স্নান করি!
অতশী
সম্ভাবনার চেয়ে কখনো কখনো বেদনা বড় হয়ে যায়
পলকে পলকে মেপেছো কী কখনো কোনো এক রাত?
কতটা অপেক্ষার হতে পারে ঊষার আভাস?
গোলাপ খেয়েছে গোপন কীট ধীরে ধীরে
অথচ মেতেছ তুমি তার বাইরের সৌরভে
কনকলতা, অতশী কি অতটা অবহেলার?
কার সাধ্য এ অমোঘ ধ্বংস রুখে দেয়?
যা তুমি নিজেই নির্মাণ করেছো নিপুণ
ধ্বংস ধ্বংস অপার খেলা লীলাছলে
সখি, সবই কি আমার দায়, তোমার কিছু নাই?
সন্ধ্যাবাতি
তুমি যেন সন্ধ্যাবাতির শিখা
কোনো এক গাঁয়ের কুড়েঘরে
হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খাও
একটা জলন্ত জিহ্বা যেন
গুনগুনাও প্রেমের কাসিদা
আমি সেই আশিক
তোমার ইশকের ডাকে
পতঙ্গের মত ঢলে পড়ি তোমার কোলে
এক অনিবার্য ধ্বংসের আয়োজনে
সন্ধ্যাবাতি সবার আলো
প্রিয় মাসুক আমার
প্রিয় মরণ আমার
প্রতিদিনের নির্বাণ আমার