পথ
শুধু ভেঙ্গে আসা নয়
পাষাণ পাথর কেটে নয় বুঝে নেয়া
শুধু মুখর ফুলের পরিবাস
পায়ে পায়ে এ এক একাকীতম’র ইতিহাস।
ধুলোয় ধুলোয় বেড়েছে
অগোচরে যদিওবা দীর্ঘ ক্লান্তির ঋণ
তবু নিরুচ্চার নির্ঘুম সে সুপ্রাচীন।
বানীহারা সভ্যতারও
আনন্দ-ব্যথার ইশারায় আঁকাবাঁকা্
বয়ে চলেছে পৃথিবী
আসলে আমাদেরই চোখের জলের ক্ষীণ রেখা!
হেসে সক্লেশে
এও এক জীবন কথন
ফুলের রচনা শিখে
আধা বাটি অন্ন আনে
আধোপেট রক্তবমন।
নূনের খোঁটা সয়ে সয়ে
বোকা জন্মের চড়ুইভাতি
কী মরণে মেনে নেয়
স্বপ্নচোরের আঁতিপাঁতি-
বুকের কেতাবে লেখা
অধিকার- প্রবল সকাল
বুঝবার আগেই অগোচরে
ধেয়ে আসে অকালে আকাল।
আহারে জীবন… শুধু
বিকিয়ে দেয়া বিক্রিত মন
দেনাহীন দেনা পরিশোধে
কত অপারগ নত প্রকরণ!
প্রেমমোহনার চারুমিতি
চলো গাঙ্ হই মেছো বিল হই
ভালোবেসে ফের গাঙচিল হই
সাগর হই মেলি উড়াল আকাশ সনে
মেঠোপথ হই ফসলি মাঠ হই
চলো হই মনে খোলা প্রান্তর।
তুমি নক্ষত্র ছড়াও আমি রাত হই
প্রাণে গান হই হৈহৈ হাওয়াবেশে
হাসি রোদ হও দুপুরে বাঁশি হই
খুঁজি ছায়ার আরতি কই
ভালোবেসে হৃদয় বাড়াও
দূরদেশ হই প্রেম প্রতীক্ষাসই
আমি লৈ হৃদয়েরও অধিকতা।
প্রিয়কথা হই চলো
কথা বললেই কবিতা হও
পুষ্পমাল্যবৎ বরণের প্রীতি হই
পাখির পক্ষ হই মধুর অজানা লৈ
ভ্রম হও আমি লৈ ভ্রমণের পদ
চলো পরাজয় হৈ দুঃখের খতি পূরে
তীরভূমি হই ভালোবেসে- চলো
হই মহতি খেয়ালে সর্বংসহা।
চোখের তারায় প্রিয়মুখ তুমি
চিরউৎসুক হৃদে কাঙ্খাধারা,
আনন্দপাড়ায় উজ্জ্বল উছাস হও
চলো হই বেদনপথে শ্বসনের সবুজতা
সংযম লৈ বৃষ্টির অধীরতা চলো
বুনোফুল হই বেনোজলের পরিমিতি
সব মুখরতা হই মৃৎবৎ নীরবতা ঘেষে
চলো সহজে শুদ্ধ হই পৃথ্বী, ভালোবেসে।
যদি হাত ধরো সহমর্মে
একটা দেশলাই
সাথে একমুঠ বিড়ি
এমন রসদে লই পৃথিবীর পাড়ি…
কবি ক’ন- ‘আগুনই সর্বে মৌলিক।’
তাই রসকষ-সিঙ্গারা-বুলবুলিহীন ছেরি
ও ছেরি- আমার নাদান প্রিয়তমা,
তুমিও লগে যদি আসো
বন্ধুর বিপ্লবী অভিযাত্রা আমি
সহমর্মের সাকল্যে মসৃণ করে নেবো।
ধরো,,,
এ অভিগমনে কোন অপাঙ্তেয় বৃষ্টি
বিরামহীনতা যদি পায়; যদি আবার কোন
নূহ'(বিপ্লবী কেনানের পিতা)র প্লাবন-
অথবা বহে যদি শুভ্রনীল তুষারঝড়-
পৃথিবীর মিত্রপক্ষীয় রেললাইন যায় ঢেকে;
যদি ডেনড্রাফের বিষণ্ণতা পায় আমাদের
ঝরকল্লোল চলারথ; যদি মুষ্টির বিড়িগুলান
ভিজে যায়; হাতের দেশলাই আর না রাখে
সূর্য-বারুদের আচার,,
তাহলে?
তবে আমিও ঝরাবো; আমিও পোড়াবো
মৃত্যুর মুখে জীবনের উদগ্র কামনা- দীর্ঘ
উপবাসী একজীবন নিষ্ঠার হাড়। হাতুরী,
শাবল, গাইতি হয়ে ভেঙ্গে দেবো মেরুবাসী
বরফের দ্বিধা- সচ্ছল করে দেবো আমার
কমরেডদের সমস্ত চলাচল। বরং আমরা
খসাবো- আমরা জাগাবো বিকল্পনের
ধারাক্রম- মানুষের সব’চে সলজ্জা সহযোগে
সর্বোচ্চ স্বাধীন উচ্ছ্বাস- এক আগুনে এক
ভুবনের সমস্ত শৈত্য প্রেরণার উষ্ণতায়
গলাবো। তোমার অধর চুম্বনে শুষে নেবো
লক্ষ প্লাবনের জল; তোমার অন্তস্থ করে
এমন চুরুট জ্বালাবো,,,
প্রিয়তমা,
হে আমার নাদান প্রিয়তমা
হাত যদি ধরো বিপ্লবী সহবন্ধু হও
জনপথের মোড়ে মোড়ে, আমি
সকল আর্তির বাঁকে আজীবন তোমাকে,,
শুধু তুমি এক অনুর্বরা পৃথিবীকে দিয়ে
যাবো ফুলে ফসলের সর্বস্ব দান।
বিশ্বাস করো,
আমি কবিতার কাছে মানুষের বেদনাকে
লাল লাল ক্ষতফুলে গেঁথেছি। সেধেছি
এক বিনম্র ঔদ্ধত্য বীণা; তা’র ঝংকারে
আমাদের নীলছোয়া পথটাকে যখনতখন
ভীষণ মুক্তির বেগুনী ঔরসে বাড়াবো।
এর জন্য বল,,
প্রচিত আগুন তোমার থেকে কী আর
কোথায় পৃথিবীর কোন প্রেমমোহনে!
কবি বলেন- ‘আগুনই সর্বে মৌলিক’।
ছেরি, নাদান ছেরি, ও আমার
মৌলিক প্রিয়তমা, হাত যদি ধরো,
আমি সন্ধান করি না পাপাশ্রয়ী দেবতার।
বঞ্চিতব্যথার অভিমান
তবু দিন কেটে যাবে
দিনগুলি কেটে যায়
ক্ষুধার পৃথিবী ভরে সন্ধ্যারাগিণী
যে-রূপে আঁধারে হারায়
যে-রূপে নিত্য- নিতুই
এ পাশে ভাঙ্গনে মিলে ও-পাশে গড়ায়
স্বপ্নের শেষবিন্দু ভুঁই
বেঁচে থাকে মাঝেকার হারা কল্পলতা
কিংবা থাকেনা কেউ, কিছুই থাকেনা
স্মৃতিচারী অবকাশদাতা।
ব্যাথার জীবনে থাকে ফুলের বেহাগ?
কার আছে শখ এত কে খুঁজে সোহাগ
বঞ্চিতের থাকতে নেই চাওয়া অবিরল
আহ্লাদে থাকবে কেন অভিমানী বল্!
ফুল যদি ফোটে তবে ভেতরে ফুঁটুক
ঝরুক অযতনে ভেতরেই মরুক
বঞ্চনার কালো রক্তজবা
আর একদিন অদৃষ্ট পোকা হয়ে এসে
মুখ ভরে উগরে দিক অন্তর কা’বা!
কিছুই হবেনা কারো…
তা’তে কিছুই হয় না-তো মলিন
দূরের আকাশে যে সর্বশেষ তারা
গুনতে চেয়েছে কী কেউ কোনোদিন!
কবি পরিচিতিঃ
মাহফুজ সজল- জন্ম, বেড়ে উঠা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ‘ঘোড়াউত্রা’ নদীবর্তী ‘বলিয়ারদী’ গ্রামে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষে সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিছুকাল মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন; বাজিতপুর ‘পৌরাণিক থিয়েটার’ এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।