অশোক বাজপেয়ির কবিতা । মূল হিন্দি থেকে ভাষান্তর অজিত দাশ

0

অশোক বাজপেয়ির কবিতা
মূল হিন্দি থেকে ভাষান্তর অজিত দাশ

কেউ আমরা জানি না

কেউ আমরা জানি না
আর ক’দিন আছে আমাদের হাতে!
মুখে খাবারের টুকরো নিয়ে
নীড়ফেরতা কোনো পাখি,
হয়ত আনমনে বসে যাবে
বিদ্যুতের এক তারের উপর,
এবং আহ্লাদে ঝুঁকে পড়ে
ছুঁয়ে ফেলবে দ্বিতীয় তারও

শুকনো ডালে ধীরে ধীরে
সাড়ি বেঁধে চলা কোনো ক্ষুদ্র পোকা,
হয়ত লাকড়ি কুড়ানো এক বুড়ির
ছিঁড়ে জুতোর নিচে পিষে যাবে।

ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে
দ্রুতগতিতে ছুটে আসা
কোনো স্ফুলিঙ্গ, হয়ত বিঁধে যাবে
উড়ন্ত প্রজাপতির বুকে।

কেউ আমরা জানি না
আর কতটুকু সময় আছে,
অপেক্ষা করার জন্য।
হয়তো প্রেম আসবে
একটি হলুদ খামে ভরে,
ডাকযোগে যেনো কিছুটা সময়
আরো বাকি আছে,
কাঁঠালের মুচি খাওয়ার
উপযুক্ত হতে; পৃথিবীকে পুনরায়
সবুজ প্রাণবন্ত এবং দয়ালু
হয়ে উঠতে, কিছুটা সময়
আরো বাকি আছে।

দরজায় কড়া নড়বে
আর সে বলবে-চলো,
তোমার সময় হয়ে গেছে।
কেউ আমরা জানি না
আর কতটুকু সময় আছে-
তোমার না আমার।

সে আসবে
যেমন করে আলো আসে
যেমন করে মঘ ছেয়ে যায়,
ফুলের মতো খিলখিলিয়ে
হাসে ছোট্ট শিশু,
যেমন করে অন্ধকারে ভয়
জাগিয়ে দেয় শুন্য ঘর।
সে আসবে নিশ্চিত!
কিন্তু তার আসার জন্য
আর কতটুকু সময় বাকি আছে
কেউ আমরা জানি না।

শুধু শব্দ দিয়েই নয়

শুধু শব্দ দিয়েই নয় স্পর্শবিহীন ছুঁয়ে,
স্পর্শবিহীন চুমু খেয়ে, জড়িয়ে ধরে
দূর থেকে ফুলের পাপড়ির মতো খুলে খুলে,
না দেখে কল্পনায় এনে- আমিও তাঁকে বলেছি।

প্রার্থনা সংগীত

সময় বদলাক আর না বদলাক,
ভরসার একটা জানালা অন্তত
খোলা রাখা চাই।

হয়তো কোনো নারী
বাসন্তী কাপড়ে, নাম না জানা
বৃক্ষের নিচে অজ্ঞাত দেবতার উদ্দেশে
ফুল-চন্দন রেখে যাবে।

হয়তো কোনো শিশুর খেলনা
হারিয়ে গিয়ে আমাদের ঘরে
এসে পড়বে এবং সেটি
ফিরিয়ে দিতে হবে।

হয়ত দেবাসুর সংগ্রামে,
রক্তাক্ত হয়ে কোনো প্রাচীন শব্দ
পৃথিবীর নিষ্ঠুর বাস্তবতায় ম্লান হয়ে,
কোনো কবিতার উষ্ণতায়
সামান্য বিশ্রাম নিতে চাইবে।

আমি আমার সময়কে
প্রতিযোগীতায় লাগিয়ে দেব।
বাজিতে লাগিয়ে দেব আমার
সব শক্তি, সাহস আর আকঙ্খা।
তারপরও অন্তত
ভরসার একটা জানালা তো
খোলা রাখা চাই।
যেনো হেরে যাওয়ার আগে,
নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগে
অন্ধকারে নিজের শেষ অস্ত্রের
দিকে তাকিয়ে-আরো একবার,
বেঁচে থাকার গান গাইতে পারি।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য
Share.

Comments are closed.