আনোয়ার ঘানির কবিতা । বাংলা ভাষান্তরঃ গৌরাঙ্গ হালদার

0

আনোয়ার ঘানির কবিতা
বাংলা ভাষান্তরঃ গৌরাঙ্গ হালদার

যুদ্ধের পুত্র

শৈশব থেকে আমি খুঁজছি আমার মুখ
মুখ চুরি করে নিয়ে গেছে যুদ্ধ
আমি যুদ্ধের পুত্র
আমার হৃদয় এক অন্ধ মরুভূমি
আমার স্মৃতি একটি ভাঙা আয়না
আয়না টুকরো টুকরো হয়ে গেছে
কঠিন যুদ্ধের নাচে।

আমি এক ইরাকি লোক

আমার জীবন মুলতুবি করা হয়েছে
আমার দৃষ্টি সৌন্দর্যের কিছু জানে না
আমার স্বপ্নের পিরাণ খুব ছোট
আমার হাত জনশূন্য রাস্তার মতো ফাঁকা
আমার কামনা কেবল রক্ত আর অশ্রুবিহীন ফোরাত দেখা
আমি বাঁচতে চাই মিসাইল বিহীন শিম ক্ষেতের মাঝে
মিসাইল ভেঙ্গে দিয়েছে ব্যাবিলনের পাজর
যুদ্ধের কন্যা ব্যাবিলন, তুমি তো আমারই মতো
তোমার মুখ নেই, স্বপ্ন নেই
তুমি ঘুমাও শুকনো মাঠে হাসি ছাড়া।

ধ্বংস করে দেয়া দেশের লোক আমি
যুদ্ধের দেশের মুখবিহীন লোক আমি
এখানে নেই কোনো গোলাপ
পাখিরা তাদের গান ভোলার কথা ভেবেছে
এখানে নেই কোনো ঠোঁট
ফোরাত নিজেই বেঁকে গেছে
একটি বাদামি সজারুর মতো।

ইরাকে সূর্য হলুদ নয়
ধোঁয়া তার গালে লেপে দিয়েছে কালো রঙ
চাঁদ এখানে ফ্যাকাশে আর আমি
এই ভচকানো দুনিয়ায় শেষ প্রেমিক।
আমার হৃদয়ের দিকে তাকাও
তুমি দেখবে তা শূন্য
আমার চোখের দিকে তাকাও
তুমি দেখবে তা অন্ধ ও লাল
ইরাকে কোনো সুন্দর নেই
আমাদের নারীরা ভুলে গেছে তাদের প্রদীপ্ত ত্বকের কথা।

আমি অন্ধ একটি গাছ

সন্ধ্যার মৃদু সমীরের গুঞ্জন আমি জানি না
আমি জানি শুধু এই জগতের
জীর্ণ ধ্বংসের অবশেষ
ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা।

আমার পাতাগুলো বিবর্ণ
আমার স্বপ্ন বসে আছে সূর্যাস্তহীন আবছা সন্ধ্যায়
অন্ধ দরোজার কাছে।
ধূসর পাখিটা তার মিলিয়ে যাওয়া ফিসফিস ভালবাসে
তবে যখন সে খোঁজে তার বাস্তব মুখ
দুঃখী শাখা প্রশাখা ছাড়া সে পায় না কিছু আর।

কবি পরিচিতিঃ
জন্মঃ আনোয়ার ঘানি’র জন্ম ১৯৭৩ সালে। ইরাকের ব্যাবিলনে। একাধারে কবি চিকিৎসক ও হাদিসবেত্তা। আরবি ও ইংরেজি –দুই ভাষাতেই লেখেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৮০। নিজের দেশ সহ ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ায় ৫০ টিরও বেশি পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে। দেশে-বিদেশে অনেকগুলো সম্মানজনক পুরষ্কার পেয়েছেন। ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি পঠিত কাজের মাঝে ‘আই অ্যাম অ্যান ইরাকি ম্যান’; ‘ইট ইজ আ ম্যাটার অব লাভ’; ‘মঞ্জুনাথ’; ‘ট্রাভেল’; ‘রেইন শাওয়ার্স’; ‘হি ইজ আ সোলজার’; ‘আ ফার্মারস চ্যান্টস’; এবং ‘কালার্ড হুইসপার্স’ উল্লেখযোগ্য।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য
Share.

Comments are closed.