হাসিন এহ্সাস লগ্ন’র কবিতা

0

ভেজে উপশহর, ব্রিটিশ কাউন্সিল।
কাদায় থপথপ পা ফেলে রিকশায় চড়তে মনে পড়ে তোমার বাসক পাতার ঘ্রাণ।
সোঁদা গন্ধের থেকে বহুদূরে ঠেলে দ্যায় তা।
রাত-ভোর বৃষ্টি বেঁধে রেডি করি প্রেজেন্টেশনের খসড়া।
‘এ ফ্রিহুইলিন’ টাইম’ বারবার বাঁধ সাধে তাতে।
তবুও বৃষ্টির তালে ভিজতে থাকে ইলেক্ট্রিসিটির তার, আর ব্লু জিন্সের কদমের মতো দৃশ্য না জন্মাতে দ্যাখার ব্যর্থতা।
সকালে কেউ বলে, সেখানেও নাকি বৃষ্টি।
তুমি বৃষ্টিবন্দি হয়ে দেখছো ‘দ্য ক্যুইক অ্যান্ড দ্য ডেড’।
না, তারচেয়ে বরং দেখতে পারো ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুকু’স নেস্ট…’
আর শোনো কাকতাল।
‘নীল শহরে বৃষ্টি’, ‘কাক ও কোকিলের বৃষ্টির আহ্বান’…
আর আমি, শৈশবের পাঠ গায়ে মেখে হাঁটি আর ছড়িয়ে যাই, ‘ঘন মেঘ বলে ঋ, দিন বড় বিশ্রী।’
দেখি থোকায় থোকায় ঝোলে ‘ন্যাশভাইল স্কাইলাইন’।
নামিয়ে আনি, মেখে খাই।
কেউ শোনায়, ‘হোয়েন ইউ রুস্টার ক্রো’স অ্যাট দ্য…’
ওহ্, নীল নীল নীল সব কেমন নীল!
ভিজে ভিজে ভিজেই গেছে মেঘদূতের পাতা (কিংবা পাখা)
অথচ দ্যাখো!
‘অন্তস্তোয়ং মণিময়ভুবস্তুঙ্গমভ্রংলিহাগ্রাঃ
প্রাসাদাস্ত্বাং তুলয়িতুমলং যত্র তৈস্তৈর্বিশেষৈঃ।।’

এমন হ’লে আমি দেখতাম সুইচবোর্ডের দিকে
এই দুই সেকেন্ডে মেরিগোল্ড ডুবে যেতো।
হারমোনিয়ামের রিড খসে পড়লে
শুনতে যেতাম স্নানের শব্দ
সেখানে কিছু হলুদরঙা বাবলাকাঁটার সাথে কোত্থেকে ভেসে আসা কটনবাড জড়িয়ে থাকে।
চুলোয় চড়ানো গরম পানি ফুটছে,
সেই তালেই তো ভাঁটফুলরা মেশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের সাথে।
ভাতের কাড়া করতে থাকি, অনেক কাড়া…
আর হাঁটি অডিটোরিয়ামের ভেতর দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছোবো
লি পো’র ভেতর।

তুমি হয়তো জহরের ‘জলভরা স্মৃতিপুঞ্জ’ নও,
তবু তোমায় দেখলে বাতরাজ দিয়ে পুতুল বানাবার উৎসাহ আসে মনে।
কচুরিপানার নাম কেন বাতরাজ, এই ভাবনায় পায়।
শুক্রবারের ক্ষীর, ধানের লালপোকা, আইলের প্রজাপতি,
চৈতন্য মহাপ্রভু, অতঃপর…
‘কাষ্ঠের পুতুলি যেনো কুহকে নাচায়।’
পলিথিনে মোড়া ঘরবাড়ি, ছোট্ট সবুজ সাবান, সাপুড়ের মন্ত্র আর জিপসীর ক্যারাভান…
তোমার ভেতর থেকে দেখলাম সবটাই।
দেখায় তো ভালোই মৃগতৃষ্ণিকা
আর কুটকুট করে মর্কটক’রা যারপরনাই।
শুধু তারপুতুল, বেণীপুতুল, লাঠিপুতুল, ছায়াপুতুল
ঐ আরকি, মৃদুমন্দ তড়পায়।

সন্ধ্যার আজানের মতো উদ্বেল এলোমেলোমি নিয়ে এসো।
কিংবা দুপুর-ঘুমের পরের কূলাতিক্রান্ত বিষাদ।
তখন ভরসন্ধ্যাকে সকাল বলে ভ্রম হয়।
তুমি কি শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল!
পুকুরে চাঁদের ছায়া?
জলবৎ হও, জোন বায়েজের গানের মতো।
তুমিও তো বলেছিলে, আমার পোয়েট্রি ‘লাউজি’।
কৃষ্ণচূড়ার তল থেকে ডাকে ঘিয়ারঙের কুকুর,
বাষ্পীভূত চুমুরা ঘনীভূত হতে থাকে আর
ওপারে হয় রেভল্যুশনারি স্পিরিটের বিসর্জন
শুধু দাঁড়ায়ে আছো তুমি ঠায়, আনওয়াশড্ ফেনোমেনন।

তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলোর ওপর
এঁকেবেঁকে, বেঁকেএঁকে সাইকেল ঘোরাতে ভালো লাগে।
কখনও কখনও সেগুলোয় ক্যাডবেরি-রঙ ধরে।
কৈবর্তজীবনের অস্তিত্ব-সংকট হাতে রেখে
ইচ্ছে করে একটুখানি সাঁতার কাটি।
এখানে চলা দাঁশাই পরবে দেখি বৃত্তাকারে-অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরার নান্দনিক-সৌকর্য।
কিংবা মাটি-পাথরের ন্যাড়া পাহাড়।
কোথাও-কোথাও দু’এক প্রস্থ জেদি একগুঁয়ে ঘাসের চাঁই মাটি কামড়ে রয়ে গিয়েছে তখনও।
ঘাট-আঘাটার প্রান্তে একলা ভেজে কাকতাড়ুয়া।
আবার ‘শান্ত এই বনভূমির ভিতরে ঢুকে শৃঙ্গারে শৃঙ্গারে সঙ্গমে সঙ্গমে অভুক্ত উদগার নিয়ে মিশে যাই…
আমাদের হৃদশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে, আমাদের চিৎশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে।’
সাঁড়াশি অভিযানের পর বাকি থাকে কিছু?
তারা তো পালায়।
দিগ্বিদিক ছুটে ছুটে অতলান্ত পায়।
তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলো উপড়ে ফেলা হলো,
আর একটা কবিতার নিষ্পত্তি।

*রাজশাহীতে ৩১ মে ২০২৪ ভাঁটফুলসূত্র আয়োজিত ‘হিরণ্ময় ডানার বিস্তার’ শীর্ষক পাঁচ কবির কবিতাপ্রহরে পঠিত কবিতা।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য
Share.

Comments are closed.