(১)
রমণ নেই সই
কি অদ্ভুত জগৎ গড়ে গেছ সন্তরা,
প্রসঙ্গ যখন আমার, সেখানেও তুমি দখলবিষয়ক মন্ত্র পাঠ করো—
গানে গানে মেলা বসে ক্যাম্পাসে, চিরল চিরল পাতায়
গুনগুন রমণ খুব—তবু চিলের ওড়াউড়ি, ছাড়া ছাড়া ভাব
বাহাস ফোটে বন্ধুমহলে, পরিচিত পাখিদের কোলাহলে
একটা ফিঙে ছাড়া, আরেকটা ফিঙে একা-একি ওড়ে—
এ-দায়ে বন্দুরা কেউ আমায় আর জাতে তোলে না।
এ যে কী কষ্টের, শুধু একাকী ময়ূর হলে যায় জানা…
অপূর্ণ থাকা দীর্ঘ চুম্বনটি এখনো ঝুলছে
লেকের কৃষ্ণচূড়ার ডালে—
সন্তরা, তোমার কাছে আমার জীবনালংকার পড়ে আছে
ফিরিয়ে দেবে নাহ?
(২)
প্রার্থনা
অর্জুনগাছের অনুরণন থেকে পেঁজা তুলোর মতো এপাশ ওপাশ করতে করতে একটা বিচ্যুত পাখির শাদা পালক ঝরে যাচ্ছে,
তখন সুর হচ্ছে চার্চের মর্মমূলে
গত সন্ধ্যার ট্রেন এক্সিডেন্টে যে মেয়েটি মারা গেছে,
তাঁর বাবা, পবিত্র’দার—
এরপর কোনো ট্রেনের হুইসেল লাগবে কেমন?
হাণ্ট করবে জানি,
খানিক আমার ভাতিজার বাক্কা ডাকের মতো—
একটা শালিক উড়ছে খুব কার্নিশের ঘোরে, আত্মার প্রতীকী রূপে—এই ওড়াউড়ি প্রার্থনার চঞ্চলতা নাকি?
রিচুয়াল যখন শেষ। তখন প্রার্থনা ভাঙছে, ভাঙছে সুরে সুরে
‘সুরক্ষা যীশুর কোলে’
চার্চের জীবিতজন, তখন গমগম উঠে গেল
এই এবার পাখির পালকটার ঝরা শেষ হল
কফিনের শেষ পেরেকও—
(৩)
তুমি এক রোশনাই
একা হতে হতে হতেছি একা
হাসো কেন ফুল, নয়নতারা?
তোমার ছিল আলোকিত করার তীব্র প্রদীপ—
এই তো সেদিন,
তুমি যেদিন যাচ্ছিলে চলে…
সমস্তই ঘোর ঘোর আধিয়ার অন্ধকার ছিল
তোমার এক একটা পদস্খলনে
একটা করে দিয়া নিভে যাচ্ছিল
পথের শেষ প্রান্তে তুমি মিলিয়ে গেলে আর
সমস্ত আলোর আশা তখনই হারায়ে গেল
এরপর
যে বিন্দুই আঁকি শেষ পর্যন্ত তুমি হয়ে ওঠো—
(৪)
বিষ্যুদবারের সন্ধ্যা
খানকা শরীফ পেরিয়ে যদি আমার দাদু বাড়ি হতো
তবে বোধহয় তোমার সঙ্গে সহজে প্রেম করা যেতো
নদীর পাড়ে দাড়িয়ে যে বেলগাছ, তার জীবন সংশয় নিয়ে
তোমাদের উঠানে উঁকিঝুঁকি দিতাম—
তোমাদের নালার ধারে যেতেই কেবল বুঝেছিলাম,
পাট পঁচা গন্ধও ভালো লাগতে পারে
যে মহিষটি তৃপ্তির স্নানে ব্যস্ত সে নালেই, তার মতোই
যদি পরে থাকা যেতো…
তবে বোধহয় তোমার সঙ্গে সহজে প্রেম করা যেতো—
ও গো মেয়ে, চিরল চিরল হাতের মেয়ে,
সন্ধ্যার সে বিষ্যুদবারের সন্ধ্যা
ও
আমার গল্প তুমি কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় আগলে রেখো—
(৫)
নওগাঁ
নীল নীল সালোয়ার-কামিজের উসকানিতে রতিকান্তের আহ্লাদ টের পাওয়া গেল,
টের পাওয়া গেল আমার প্রণয়ের…
সে ভীষণ এক মফস্বলি গল্প, বন্ধুর বিবাহোৎসব—
অতি ভাদ্রের তাল-বেতালে ধুপ ধুপ ছায়া কেবল
এপাশ-ওপাশ,
তখন টের পাওয়া গেল আদি কামের নূর নাহার!
আত্রাইয়ের সকল আঁক-বাঁক শুধু ফুটে ওঠে যেন
নুর নাহারের কোমড়ে, চমকে চমকে ধমকে ধমকে…
এখানে এক ঝাক লিবিডো নাচে, ময়ূর ময়ূর ছন্দে—
.
একেকটা বেলিফুল, নূর নাহার
প্রতিটি শিউলিফুল, নূর নাহার
নওগাঁর এই আত্রাই, নূর নাহার
মেয়ে তোমার অদ্ভুত হাসি কোলাজের মতো ভাসছে…
.
মাল পাহাড়ি হৃদয় আমার এখানে থমকে যায়