ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী
“মানুষকে ঈর্ষা করার কিছু নেই, তারা ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না” কথাটি একটি লুপ্ত ভাষায় লেখা প্রাচীন দেবতা ইকইয়াইয়া’র। সম্প্রতি এটা আমরা জেনেছি ডক্টর পি এর নিকট থেকে। তিনি হলেন লুপ্ত ভাষার একজন গবেষক। ড. পি টানা নয় বছর সাধনার পর চামড়ার শরীর থেকে একটি মাত্র বাক্যের অর্থ উদ্ধার করতে সমর্থ্য হয়েছেন। অবশ্য এতেই অধ্যাপক হিসেবে তার প্রমোশন নিশ্চিত হয়ে গেছে বলা যায়। কেননা অতীতে কোনো গবেষকই সম্পূর্ণ একটি বাক্যের অর্থ উদ্ধার করতে পারেননি। একটি বা দুটি শব্দের অর্থ বের করেই অধ্যাপক হিসেবে প্রমোশন পেয়েছেন।
“প্রাচীন লিপি থেকে পাওয়া এ বাক্যটির অর্থ এখন আমাদের কী কাজে লাগতে পারে?”
সেমিনারে গবেষণার ফলাফলটি উপস্থাপন করার পর একজন তরুণ গবেষক ড. পি এর নিকট জানতে চাইল। প্রশ্নের উত্তরে প্রায়-নিশ্চিত-অধ্যাপক ড. পি দেবতা ইকইয়াইয়া’র দেবত্ব শক্তি সম্পর্কে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। শেষ করলেন এটা বলে যে, হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন লিপি অনুযায়ী ‘ইক’ শব্দের অর্থ মর্ত্যসন্তান। আমি তখন ভাবছিলাম— মানুষ কী আদৌ ঈশ্বরকে ঈর্ষা করতে পারে?
পথ, পথচিহ্ন ও গন্তব্য
” কোথাও যাওয়ার জন্য পথের যে-কোনো একটা বিন্দু বা চিহ্ন থেকে শুরু করতে পার” শিক্ষক বললেন।
অল্প ক’জন ছাত্র উপস্থিত হয়েছি ক্লাশে, কেননা প্রবল বন্যায় চলাচলের পথগুলি তলিয়ে গেছে। লোকালয়ের কিছু চিহ্ন এখনো আছে— খাম্বা ও বড়ো দালান। পথ জলমগ্ন হলেও সব চিহ্ন হারায়নি।
“মানুষ সবসময় পথচিহ্ন রেখে যায়” একজন ছাত্র শিক্ষকের দিকে সরাসরি না তাকিয়ে বলল।
“তবে মানুষ কেবল চলা শুরু করতে পারে” শিক্ষক বললেন।
বৃষ্টি এখন থেমে থেমে হচ্ছে। একজন ছাত্র কিছু একটা বলতে চাইল। হতে পারে “শেষ বিন্দু” বা “গন্তব্য” বা এমন কিছু সম্পর্কে।
“এই বৃষ্টির শেষ গন্তব্য কোথায়?” একজন ছাত্র জানতে চাইল।
“…তবে, গন্তব্য হলো এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে তুমি পৌঁছেছ কি-না নিশ্চিত হতে পারবে না। …যেখানে পথচলা নেই, সেখানে গন্তব্যও নেই।” শিক্ষক তার কথা শেষ করলেন।
“পথের গন্তব্য হলো ঈশ্বর যেখানে থাকেন।”
এবার শিক্ষক ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু সকলেই নিরব বসে রইল।
” পথের প্রতিটা বিন্দু, চিহ্ন বা স্টেশনে একজন ঈশ্বর বসে থাকেন। কেননা, প্রতিটা বিন্দু পূর্ববর্তী বিন্দুর গন্তব্য” — মানুষ হচ্ছে একটা বিন্দু থেকে আরেকটা বিন্দুর মধ্যবর্তী অবস্থা।” আমি বললাম।
বৃষ্টির জন্য স্কুল ব্যাগটি স্কুলেই রেখে এসেছি। মাথায় তবু চিন্তার ভার চেপে বসেছে। “আমরা তবু সেই পথে চলি যে পথে গন্তব্যের ধারণা বা এরকম কিছু আছে।” এরকম একটা বিন্দুতে- চিন্তা বা চিহ্নে আমি থামলাম।