সূর্যসন্ধানী
দিনের ক্ষীয়মাণ আলোয় সর্পিল পথের ঢালু অংশে একজন আলুথালু চেহারার মানুষ লাঠি নিয়ে কি যেন করছে। একটু এগিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম বিষয়টা কি। পাহাড়ের ছায়া যেন তার উপর উপুড় হয়ে আছে। নির্জন সড়কে কি করছে লোকটা? ঠাউর করে দেখলাম কাঁচাপাকা দাঁড়ি আর উস্কুখুস্কু চুলে ঢাকা পড়েছে তার চেহারা। বাঁকাচোখে এক নজর আমাকে দেখে থোড়াই কেয়ার করি ভঙ্গিতে নিজের কাজে মন দিলো। দুই আঙুলের ফাঁকে ধরা বিড়ির শেষাংশে কষে টান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে লাঠিখেলায় মগ্ন হলো। তার প্রতিপক্ষ হলো বুক চিতিয়ে শুয়ে থাকা রাস্তা। লাঠিখেলায় পরাস্ত করার ভঙ্গিতে বুক বরাবর লাঠি ধরে বিজয়ের আনন্দে হা হা হা করে হাসে। তারপর পাথর দিয়ে রাস্তার বুকে কি যেন আঁকছে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখি সে একটা এবড়োখেবড়ো নৌকা এঁকেছে। মন:পুত না হওয়ায় বারবার এলোমেলো আঁকাআঁকি করছে। আবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মাটিতে পদাঘাত করছে আর বারবার থু থু করে থুতু উড়াচ্ছে।
জানতে চাইলাম, কি আঁকছো?
দেখতে পাচ্ছো না?
সুন্দর নৌকা।
কচু! লোকটা অতৃপ্ত গলায় বলে।
নৌকা দিয়ে কি হবে?
সমুদ্রে যাবো।
সেখানে কি আছে?
সূর্য ডুবে গেছে…
সূর্য?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি নিয়ে আসবো। কান ধরে নিয়ে আসবো।
বলতে বলতে নৌকা বাওয়ার ভঙ্গি করে লোকটি দ্রুতই পাহাড়ের পাদদেশ হয়ে বাঁকবদলে সমুদ্রমুখো পথে নেমে গেলো।