শামীম হোসেনের কবিতা

0
Showing 1 of 1

তার সঙ্গে থাকে
নির্জনে থাকে না কখনো
একসঙ্গে খায়দায়
ঘোরে, অরণ্যে যায়
নিশিপাখির মতো
এডালে ওডালে ঝোলে
লুপ্ত সাধনার পাশে
রেলপথ সমানে সমান
নিষ্ফলা খেতের মাটিতে
পুঁতে রাখে বীজ
বশীকরণ, সংহার
প্রহেলিকা ধূসর প্রান্তরে
মন ডিঙিয়ে ওড়ে
নবদরজার চৌকাটে, গুঞ্জনে
ইনবক্সে থেকে থেকে
পাখি ডেকে যায়

অনেক পথের পাশে
গিরগিটি হাঁটে, রঙ পালটায়
বাঁশিসুর নিভন্ত আলোর উদ্বোধনে
মহাসড়কের মাথায়
শান্তস্বভাবে নিশিবেড়াল
ভ্রমণে গেলে
সবুজবাতি জ্বলে আর নেভে
নভোবাড়ির ছাদের নিচে
মৌন হাহাকারে
ইনবক্সে চুপি চুপি
পাখি ডেকে যায়

তার সঙ্গে থাকে
ছায়াসঙ্গী
মায়া আঙুলের সঞ্চালনে
দূরের কোনো মাঠে
তাপে উত্তাপে
নব উন্মীলনের বিস্তারে
কথার গোলাপ ফোটে
চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণে
চাঁদ ডেকে আনে
মিলন বাহুতে
শীৎকারের শব্দ লেগে থাকে
নৈবেদ্য সাজিয়ে
প্রস্তর দেহ পড়ে থাকে
মহুয়া বাগানে
একা একা কে পোড়ে
অঙ্কুরিত জবার আয়তে

অতল মহাকাশ থেকে
বহু বহু দূরে
অতিমারির চকচকে দাঁত
ভয় দেখিয়ে গেলে
নিভৃতে দুজনে
রাতকালো সীমানা ডিঙিয়ে
রিকশার টায়ারে, হুডে
একাকার ভোজে, ভোজনে
সিঁথির অঙ্কিত দুভাগে
ক্যাকটাস কাঁটা বিছিয়ে রাখে
দূরত্বের আয়নামহলে
স্বরূপ ফেরে না তার
মৃদু মৌনতায়
ঝরনার বরিষণে
জাদুর বাঁশিতে কাছে ডাকে
জিহ্বার আত্মলেহনে

তার সঙ্গে থেকেও
থাকে না কখনো
মোহ-ব্যঞ্জনে
এডালে ওডালে ঘোরে
নিশিপাওয়া বেড়ালের মতো
পায়ে পায়ে
কোন পাখি কার ইনবক্সে ডাকে
ধূলি-ধূসর মনের নগরে…


অবিকল তোমার মতো—তুমিই ছিলে
আনত বাড়িয়ে হাত জল তুলে দিলে
সে তো দেখি জল নয় আগুন অতি
থোকা থোকা ঘৃণাগুলো আমার প্রতি—
ছুঁড়ে দিয়ে—ঢেলে দিয়ে—গুছিয়ে শাড়ি
রেখে গেলে শব তুমি—শবের সারি…


পথে পথে কত ফুল দেখ ফুটে থাকে
পথিকের পা যায়—কে মনে রাখে
বেদনার লিপিগুলো পড়ে থাকে হায়—
বুকের গভীরে গিয়ে কাকে যে শুধায়
দেখ হৃদয় পুড়ে পুড়ে হয়ে যায় ক্ষয়
আহা তবু সে নিশ্চুপ পাথরে রয়!


তোমাকে ডাকি না আমি; দুঃখ ডাকি
আর মরণে মরণে হই ফিনিক্স পাখি
তীরে বেঁধা দেহে দেখ বহু ক্ষত
আমাকে পোড়ালে তুমি—পুড়বে তত
জগতের নিয়মে শুধু ভিজে যায় চোখ
গোপনে লুকিয়ে রাখি অনাগত শোক।


তোমার চোখের নিচে আমি হবো মেঘ
কোনোদিন অশ্রু নয় ঝরাব আবেগ
আমাকে লুকিয়ে রাখ বুকের ভেতরে
কলিজার পাশে রাখ গোপন ঘরে
এলোমেলো ঝড় ওঠা তুমুল রাতে
আমি যে কেটে লাল অদৃশ্য করাতে!


রাত্রির বাদ্যে বেজেছিল প্রণয়ের তাল
বুকে ছিল মধু আর ঠোঁট ছিল ঝাল
শরীরের দুলুনিতে দুলেছিল ঘাস
সূর্যের ছোঁয়াতে শিশিরের নাশ—
হাতে কেন ধরে রাখ পিতল-চাবুক
রক্ত ঝরাও—এই পেতে আছি বুক…


তোমার মতোই তুমি; আমি প্রতারিত
আমার ক্ষরণ হলে তুমি হও প্রীত
কিছু কথা লেখা ছিল হাতের রেখায়
কী করে ভুলে গেলে সমুখ দেখায়
কথা যদি বলে ওঠে হারানো সময়
কলঙ্কের চাঁদে ঢাকা অতি রূপময়!


কামনার তাপে আর জ্বলে না আগুন
সমুদ্রে ঝড় ওঠে—কাঁপে—গর্জন দ্বিগুণ
ফেলে যায় পলি আর জেগে ওঠে চর
দুহাতে বেঁধে রাখি বালিয়াড়ি ঘর—
সেই ঘর ভেঙে গেছে চুড়ির মতন
কীভাবে জোড়া দেব ভাঙা দুই মন!


ধীরে ধীরে বেড়ে গেছে তোমার বয়স
রূপ—অপরূপ—সুধা-গন্ধ-রস—
ভেসে গেছে জোয়ারের কচুরিপানায়
হাওয়া এসে একথা আমাকে জানায়
নীরব—নিথর থাকি সবকিছু ভুলে
পুনরায় পাথর হবে আমাকে ছুঁলে!


তুমি তো পাথর ছিলে—পাথরই থাক
আমার ছায়ায় কেন শরীর ঢাক
আমি তো ফুটে থাকি জংলি ফুলে
চরণের ধুলো পেলে হেসে উঠি দুলে—
কখনো পায়ে পড়ি কখনো কানে পরা দুল
এটুকু সত্য জেন; এটুকু মহানির্ভুল।

১০
তোমার চোখে কেন ফুটে ওঠে বর্ষার জল
সবকিছু মরীচিকা আহা মায়াবী ছল
মিলন মুহূর্ত যায়—এসো তবে ফিরে
আমার সকল কিছুই তোমাকে ঘিরে—
একথা ভেবে যদি নৌকা ভেড়াও
সবিনয়ে বলি আমি—যাও, ফিরে যাও…

১১
আমারও লাজ নেই শুধু শুধু তোমাকে বলি
মনে শত বাসনা নিয়ে নীরবে হেঁটে চলি—
যেতে যেতে আকাশের দিকে চেয়ে দেখি ওই
আমার ভেতরে অন্য কেউ আমি তো নই
দেখ কিভাবে বেড়ে গেছে যাবতীয় ঋণ
পলে পলে ধূসরিত ফেলে আসা দিন!

১২
তুমি মাটি হও—ফলাও ফসল, হও ফুরফুরে
আবার রাধিকা হও—সুরেলা ওই বাঁশির সুরে
আমার তো অন্ধ চোখ—শূন্যপাত্র—রিক্ত দুহাত
তোমার কাটুক তবে ফুল শোভিত গন্ধরাত
সুখে থেক—ভালো থেক তোমার মতো
বিরহ আখ্যান আমি লিখে যাব অবিরত…

দূরে, চরের ওপারে
তারার মতো জ্বলছে বিন্দু বিন্দু আলো
ঘূর্ণির মতো হাওয়া এসে
হা করে গিলে নিচ্ছে বালির আস্তর
নদীর স্ফীত ঢেউ পাড়ে ফেলে গেছে
এই ছাতিম পাতা
যা এখনও সবুজ
সতেজ তার শিরা-উপশিরা।

উলুখড় চূর্ণিত চোরাবালি
অজগরের মতো টেনে নিচ্ছে পা
হাতের তালুতে ফুটে উঠছে
রাশির নিয়তি
ভয়ের জাফরি
চিত্রে আঁকা বালিরেখা
পথের চিহ্ন মুছে দূরে সরে গেছে
কেবল উদভ্রান্ত চুলে
বাতাস এসে কেটে যাচ্ছে বিলি।

ধু-ধু অন্ধকার শ্মশানশাসিত
এই জনশূন্য চরাচর
মনে করিয়ে দিচ্ছে
সেই কালো বেড়ালের কথা
লেবুগাছের গোড়ায় প্রতিদিন যে
একা একা এসে
কামনা করে
মাছের কাঁটা
মুরগির ঝোলমাখা ভাত।

দলদলে চরে
কম্পিত শরীর দেবে যেতে যেতে
ড্রয়ারে জমানো আয়ু
বেলিফুলের গন্ধ মেখে
নত হয়ে অপেক্ষা করে
ঘোরগ্রস্ত কোনো অনুরক্ত ভোরের।

বসন্তে যখন গাছ থেকে ঝরে পড়ে পাতা
আরক্ত গুঞ্জনে পোড়ে মন
হু হু দুপুর ছাপিয়ে
বাঁশবন ডিঙিয়ে ভেসে আসে
মিলনকাতর কোকিলের শিস
কারো কারো ফিনফিনে শরীরে
ধরিয়ে দেয় উতলা কাঁপন
অতলান্ত পাথর ঢুকে যায়
বুকের গহীনে।

চোরাবালিতে কেঁপে কেঁপে
হয়তো তলিয়ে যাবে এই দেহ
চুলের সিঁথির মতো চিকন দিগন্তে
শুধু আমার মন উড়ে যাবে
ঘুঘুর ডানায়

পাঠপ্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য
Showing 1 of 1
Share.

Comments are closed.