রওশন রুবী’র ৩টি কবিতা
জল কাব্য
জল থইথই, জল থইথই, কে নেবে গো জল
জলের পরানে ফোটে জলের কমল
কে নেবে গো আসো দেখি রেখে যত ঘুম
পাড়াটা থাকুক তবে জলে ভেসে ঝুম
এ হাতে জলের ঘুঙুর পরাই কারে
দাঁড়িয়ে জলের মালিক জলের দুয়ারে।
তুমিও মালিক হও, ও হে প্রাণ সই৪
আন দেখি নিবে কিসে, জলে জল থইথই
ওপাড়ায় দিয়েছি যে বিনে দামে বিকিয়ে
তুমিও নেবে নাও, যাই যত নিকিয়ে
এ জল এনেছি যে জমজম থেকে
ভেনিস, আরব সাগর, স্বদেশ মেখে।
জল থইথই, জল থইথই, বরষার ঢল
নামছে পাহাড় বেয়ে জলের অনল
কোমল কমল গায়ে পাথরেরা হাসে
ছুটে আসে দিকহারা গোপন বিশ্বাসে
জল সে তো জল নয়, জল অনুপ্রাস
কখনো জীবন হয়, কখনো সন্ত্রাস ।
বল দেখি নেবে তুমি কি রঙের জল
নীল নীল সাদা কালো লাল টলটল
নোনা নেবে, মিষ্টিও তেতো তারই কিছু
চলে গেলে এসো না তো জল ডেকে পিছু
জলে আমি, জলে তুমি, জলে ভিজে সুধা
তিন ভাগ জল নিয়ে জন্মেছে বসুধা।
জল থইথই, জল থইথই, টুপটাপ সারি
জলকে যে জয় করে এজল তারই।
পরাভূত মন
রেবেকার সাথে কথা বলিনি দুঃখ অনেক।
শ্রমের ভেতর থেকে উঠে আসা শরীর
সবুজ মেশা চোখ, কি যেনো বলতে চেয়ে থেমে গেছে।
ডুবো বিকেলের কপালে বৈশাখের হাওয়া ছিল না আন্তরিক, কোমল।
ফায়ার প্লেসের ব্যবহারহীন বুকে ছিল নিভু উত্তাপ।
মনোযোগ নিবে বলে গ্লাস, কাপ,
শো-পিচে শব্দ তুলে ছিল মিহি মনোরম।
ওকি বেতন বাড়াতে চেয়েছিল; চেয়েছিল কি-
দুর্বৃত্তের কথা জানাতে? কথা বলিনি দুঃখ অনেক।
গতকাল বৈশাখের তাণ্ডবলীলা
তুলে আনা খবরের কাগজে ওর ছবিটা
ফুলে ঢোল হয়ে পড়ে আছে থুবড়ানো গাছের ফাঁকে।
এখন আর ওর শুভ্র রঙের ভেতর রক্ত কথা বলে না
কাত হয়ে পড়ে থাকা নৌকার মতো সবুজ চোখেও কিছু নেই
মলিন কাঁথার মতো হাত জলেস্থলে পড়ে থাকা-
শিশুর দিকে নিক্ষিপ্ত
ও বাঁচাতে চেয়েছে তবু তার প্রাণের নির্যাস,
বিপদে রক্ষা করতে চেয়েছে মমতা।
কেন কাল বলিনি তোরা থেকে যা
আমি তো জেনেছিলাম ঝড়ের পূর্বাভাস।
ওকি জেনে ছিল? সে কথাই বলতে চেয়েছিল?
অজান্তে আমিই কি তবে তাদের হত্যাকারী?
এখন কেন অনুশোচনা হয় , কেন আত্মার পাশে তীব্র ব্যথা নাচে
কেন ঘুমের মধ্যেও ওই দুটি প্রাণ আমাকে ধাবিত করে,
আঙুল তুলে যেন বলে, ‘আমিই তাদের মরণ!’
পান্তা দাও দহন থামাই
গাঁজার আগুন জ্বলা পেটের ভেতর বড় হয় ক্ষোভ রেণু
মসৃণ আত্মা আর ক্রমাগত আবেগকে সে নিহত করে।
বাতাসে মাতম জমেছে সোনার ইলিশের পরাণ কাঁপা গন্ধ।
এক-থালা পান্তার ক্ষুধা নিয়ে বন্ধ দরজায় নোংরা হাতের উদাসী চাপ
এক থালা ভাত দাও, ঝুটা হোক তবুও
একখানা কাপড়, ঔষধের টাকা,
অভাবের ভারী ফর্দ পূরণ ওসব চাই না।
অতঃপর না হয় দাস করে নিও, চাপিয়ে দিও যত সব ঝড়-ঝঞ্ঝা
এবং ডানায় সোনালি রঙ মেখে পান্তা ইলিশ ভর্তার সারি
শুকনো মরিচে দিও কামড় বর্ষবরণ ঐতিহ্য রক্ষায়
আমরা ধুয়ে দেবো সব উচ্ছিষ্ট কায়ক্লেশে।
আমাদের বসন্ত কখন আসে, কখন চলে যায়, জানি না।
বৈশাখের ভাবনা নেই, ঋতুগুলোর সৌন্দর্যময় শুধু বেহিসেবী ক্ষুধা
মলিন ছিন্ন জামার ভেতর হাড়, পেশি, ঘাম
চোখের কোটরে শুধু সর্বনাশা ক্ষুধা আর ক্ষুধা।
আমরা কি হে খোদা তবে তোমার ইয়াজুজ মিয়াজুজ?
সমস্ত পৃথিবীর স-ব সব গোগ্রাসে খেতে পারি,
খেতে পারি চাঁদ সুরুজ।
সোনার ইলিশ নাই বা পেলাম থাক দূরে নুন লঙ্কা
এক থালা পান্তা দাও দহন থামাই, পৃথিবী গিলে ফেলার দহন।