স্বভাব সুন্দর
জানি আজকাল কথা বলতে ভালোলাগেনা।
কথার পিঠে কথা। কথার পিঠে লাগানো পাখা জোড়া…
জানি গ্যাস বেলুনের মত আকাশের কোনো কোণে
গিয়ে জমা হচ্ছে কথাদের প্রস্তরীভূত মেঘ।
পাথরের চেয়ে বেশি কঠিন এসব কথা
বড্ড পাড় ভাংছে ব্যাথায় ব্যাথায়।
জানি আজকাল বড় বেশি একা আর সঙ্গতিহীন এসব কথারা মায়ায় পড়ে যাচ্ছে।
বাঁধন কি খুব শক্ত মনে হয় আজকাল?
ঘুনে কি খায় সুতোর পাটুনি?
না বলতে বলতে এই দুপুরের মাঝবয়সী ঘুমটাকে ঠেলে ঠুলে উঠিয়ে দেব পাহাড়ে।
ভালবাসা কাকে বলে?
ভালবাসায় কি একটা ও কার লাগে? জানিনা।
বাহুল্য আর বিবৃতি বর্জিত আলোকবর্ষী এইসব ভালোবাসা
ঘাড়ে গলায় মাফলারের মত জমে থাকে।
কি ভীষন শীত বাইরে ভেতরে!
সবুজ আপেলের চিবুক ধরে ধীরে ধীরে যদি
জেগে উঠতে থাকে আপনার মায়াগন্ধী স্বপ্নটা,
তবে আমি কিন্তু বেঁচে থাকার রহস্য টা বের করে ফেলবো ঠিক।
বিশ্বাস করুন আমারো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে নিজের প্রতি নিজের,
বিশ্ব সংসারের প্রতি নিজের আস্থা!
সহিংসতা বাড়ছে । কি হিংস্র হয়ে যাচ্ছি আমি,
ধারালো বাঘ নখ নিয়ে ঢুকে পড়ছি
গোপন তলোয়ারের মত তীক্ষ্ণতা নিয়ে।
কেটে ছিঁড়ে আমার প্রাপ্য টুকু নিয়ে যাব। নিয়েই যাব দেখবেন।
কেন আপনার এমনসব মুখ লুকিয়ে রাখা নিজের দিকে!
আর্তনাদধ্বনি এসে ছয়টি দেয়ালে কিছু ছটফটে ছোটগল্পের মতো
আছড়ে পড়ে। কোন পাশে সমুদ্র? কোন দিকে হাওয়ার বসবাস!
আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে,
একটা চিঠি কি করে লেখেন আপনি!
তখন কি শোঁ শোঁ শব্দে খুব দূরে বয়ে যাওয়া
খরো একটা নদী কে বোঝা যায়
মাটিতে যেমন কান পাতলেই মানুষ বোঝে জল খুব কাছে
খুব কাছেই আছে জল…
নাকি আপনার না লেখা খুব গভীরতম ইচ্ছেই
একটা নদী হয়ে গেছে!
তখন কি একটানা একটা ঘুড়ি আকাশের কোল জুড়ে খেলতে থাকে?
আপনি যখন লেখেন তখন কি চোখের ভেতর খেলতে থাকে গিটারের সাত সাতটা সুর?
কি হয়? আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে!
কেমন কুহকাচ্ছন্ন সেই সব বেদনা যা আপনি লুকিয়ে রাখেন অনবরত!
হ্যা অনেক কিছু পাই,
পাই বলেই হয়ত আমি বুঝতে পারি,না পাওয়ার কুয়াশা বড্ড তেতো।
আপনি পাবেন।জানবেন আমার স্বপ্নরা স্বভাব সুন্দর!
অপেক্ষা
কি ভীষণ সরল ইচ্ছে নিয়ে আমার দুচোখ
মধ্যরাতে এই স্বপ্নে বিঁধে গেলো।
ভোর দেখতে দেখতে আমার মনে হলো
কত কত পাখিকে আমি চিনি না। জানি না তার নাম।
অপেক্ষা এমন
অন্য শহরে কি করে নাম না জানা গাছে বাঁধে বাসা
কি করে হয় খড়কুটো, হয় নিখুঁত চোখের সরোবর!
যে বাক্য বলা যায় না সে তীব্রতা নিয়ে আমার পৃষ্ঠা ভরে যায়। পৃথিবী মাতাল লাগে।
হাত ছিঁড়ে যায়। আকাশের তারা নেমে আসে মাটিতে। পাখিদের কি ভীষণ ভালবাসি আমি।
উড়ে যাবে জানি তবু।
এই অচেনা একটা ঘরে আমার হৃদি
অকারণভাবে পুরোটা আকাশ।
অসংখ্য আবাবিল।
আর সব পাথরের টুকরো গুলো তোমার ঢেউময় কবিতা।
ঘরময় কাগজের আর্ট ক্রাফট।
আমি কেনো বানাতে শিখিনি কাগজের সমুদ্র।
আমি কেন এত সংকোচে নিজেকে লুকোতে চাই
ঘর ভরা আকাশ সমুদ্র আর ঢেউ নিয়ে।
আমার যে কষ্ট হয় অপেক্ষা হতে হতে…
সামান্য তিনদিন
মাত্র তিনদিন কিছু মেঘ ছিলো,
কিছু শরৎ কিছু বসন্তের মুখোমুখি,
হাওয়া ছিলো, উড়ছিলো কাছের বীজ,
সামান্য তিন দিন, রাত্রি ছিলো, দিন ছিলো,
জীবন ছিলো, স্বভাবতই এই সব মেঘ
তোমার প্রেমের মত নাচছিলো, তুমি নিজেকে সামলে নিলে,
সব মন খারাপের ভেতর তুমি কামড়ে ধরলে দাঁত,
হাজার রাতের স্বপ্ন নিমেষে হয়ে উঠলো আরব্য রজনীর গল্প,
তুমি জানতে এর পর আর ভোর হবেনা,
এরপর সাদা মেঘ জুড়ে নামবে রক্তের অবাধ বিস্ময়।
ভিজবে শুধু ভিজে যাবে উদাসীন কিছু মন খারাপ।
তুমি নেই। তুমি নেই বলে এই সব মন
শরতেও হতে চাইবে বৃষ্টির শেষ বিন্দু।
তোমার মেঘের মত আমাকে যতটা দেয়া যায় অপবাদ,
যতটা দিতে পারে কাছের যত নিন্দুক!
শিশির ছাড়াও ভোরের রয়েছে ব্যক্তিগত সৌন্দর্য।
অথচ ভোর বলতেই চোখে ভেসে ওঠে ভেজা চুল, ভেজা ঘাস,
উঠোনে নিকোনো নারকেল পাতার শুকনো ডাল, চেনা সরীসৃপ।
ছড়ানো ডানায় শাদা কবুতরের মত পড়ে থাকতো ঝাঁক ঝাঁক পারিজাত।
সমুদ্র মন্থিত এই সব ফুল,পাখিদের মত মেলতে পারে,
ফেলতে পারে পায়ের পাতা। কেমন স্বপ্নের মত লাগে। ভেজা ভেজা, আধো আলোয়।
বহু বহু বছর ওই পথ, আমবাগান,সবুজ মাটি,
শ্যাওলা জল, কলপাড় কিছুই দেখিনি আমি।
খুব ভোরে আমরা ঘুম থেকে উঠতাম। ফুল কুড়োতাম। মালা বানাতাম।
ভাপা পিঠা কিনে আনতাম। এই ছেড়ে আসা শৈশবের জন্য,
ছিঁড়ে যাওয়া ভোরটার জন্য আমার হঠাৎই ভীষণ কান্না পায়।
প্রতিবার
একটা নির্জন স্টেশনে
তোমাকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখে মনে হয়
যুগ যুগ ধরে এখানে বসে থাকে প্রেমিক।
ট্রেন আসেনা। প্রেম পড়ে থাকে।
যেভাবে তুমি লাফ দিয়ে নামো পরিচিত লাগে।
কুয়াশার ঘোর ভেঙে পার হও লাইন।
ওপাশ থেকে ছিঁড়ে আনো ভাঁটফুল।
যেন যুগ যুগ ধরে এমন ঘটছে।
প্রেমিকার হাতে তুলে দিতে দিতে কিছু ফুল ঝরে যায়।
কিছু ঝরে যায় যে যার।
এমনইতো হয় প্রতিবার।
চিহ্ন যাপন
আনন্দরা হাসে।
হৈ চৈ গুলো জমতে থাকে বুকের ভেতর।
মানুষ কোথায়! কান্না?
ছড়িয়ে নামে নিজ মনে প্রায়শ অন্ধকার ।
একদিন একান্ত নিজের চোখ হাতে নিয়ে রাখি।
বিশ্বাস করো যার হাতেই তুলে দিতে যাই, ভাবি যার পারগতা ছিলো,
যে কান্না খেয়েছে মায়ায়,
সময়ে তার কিছুই করার নেই।
মন জেনে গেছে। ফিরিয়ে নিতে হয় একদিন।
কান্না, যাপন অথবা সমস্ত অধিকারবোধ।
যাবো। যে পথে পথ নেই। যে পথে স্মৃতি শুধু,
ছড়িয়ে রেখে যাবো পাথুরে জীবন । চিহ্ন যাপন।
এমন পাথর চিরেই হেঁটে গেছে মন।
নেমেছে পথ করে জল ছলছল প্রপাত।
সবুজ ঘাসের বন, যাবো।
একা দুই চোখ নিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখি, কেমন বিরান ঘোর,
এ শহর। ফুলের স্তূপে ডুবে যাই দেখি,
ফুল আছে তবু নেই পলাশের গাছ, প্রান্তরে আকাশ,
দেখি অন্ধকার। বুকের বেদিতে তোমার প্রতিমার নাচ।
জানালাটা নেই। আলো নেই। হাওয়া নেই।
এত হৈ চৈ কাকে দিই। আনত ব্যথা, বুক, এত অসুখ?
মানুষ নেই। আছে কত! তুমি আছো। তারা আছে।
শুধু নেই চেনা মুখ।
- রাজশাহীতে ৩১ মে ২০২৪ ভাঁটফুলসূত্র আয়োজিত ‘হিরণ্ময় ডানার বিস্তার’ শীর্ষক পাঁচ কবির কবিতাপ্রহরে পঠিত কবিতা।