ইলিশ কাঁটা
আলোকিত পায়রার দলে
বাকুম বাকুম গান চলে
আলোকবৃক্ষতলে ছায়া
সুদূরের তুমি হয়ে জ্বলে
মুগ্ধতা ফের আসে, ফের
টান তোলে তুমিগন্ধের
সব মায়া তোমারই তো মায়া
সব মদ একই মাদকের
প্রাপ্তির ঘোর হয় দৃঢ়
আমাকে নতুন করে ছিঁড়ো
আঁশে দিয়ো ব্যথা পুরাতন
ধুতে হয় মহামন্দিরও
নাই তবু শুধু আছো তুমি
চন্দ্রের প্রস্তরভূমি
শুক্ল-অমায় উচাটন
চুপি চুপি ছায়া ধরে চুমি
মেলা আছে রোদের মাচাঙ
তুমি যদি আঁধারের নাঙ
আলোকপুষ্প কেন ফোটো
ধারা ধরো জোছনার গাঙ
শিশুর মতোন অজ্ঞাতে
কাঁচা ত্বকে ধূম মৌতাতে
দৃশ্যে দৃশ্যে ফের ছোটো
কাঠি কাঠি, বোধমৃদু তাঁতে।
পায়েশের ঘ্রাণের হনন
যেমন রকম দিনে আমি হারানো নোলক খুঁজে পাই
কান্নাকে গিলে নিয়ে তুমি পালাও কেমন অ-বিদায়ী!
যেমন তাপের দেশে আমি জলনীল স্বচ্ছতা মেলি,
তুমিও তো এঁকে আসো পিঠে তালবন, শরতের কেলি;
আজকের মতো দিনে ফের কোমল কিশোরী গাভী থামে-
মদ্যপ বাঁশুরিয়া দেখি, আলোকবৃক্ষতলে ঘামে,
প্রাণ আমার, বৈদেশী প্রাণ, ষড়রিপু ষড়ঋতু লাগে!
আবছা কাজল দেশে ধীরে তুমি ছোঁয়া মানচিত্র জাগে!
তবুও বাঁধি নি আপনাকে নশ্বর দূর অনুরাগে,
আবার ফিরেছি বর্ষায়, পাখিদের নাচ নেবো বলে…
পালকের নীল ঘোর চোখে, পায়েশের এঁটো ঘটি কোলে।
নাগর নদের গান
মেঘের শব্দ পাও, মৃতপাখি?
হাওয়ার পালক পাও কঙ্কাল ডানায় তোমার?
কালো কালো পাহাড়ের থেকে
সবুজাভ মালভূমি থেকে
চিকচিক ধূসরের, মতিবেঁধা কোমরের জলছাপে জলছাপে
জীবন পাও না তুমি ফিরে?
দৃশ্য দৃশ্য আমি উড়োপথে উড়িয়েছি ঘুম
স্বপ্নের কবুতর শান্তি দেয় নি হাতে তুলে?
নরোম নখর ধরে শুভবোধ চিঠিটুকু
পারো নি কি নিতে তুমি খুলে?
আদি আদি জনমের যুদ্ধকে ভুলে
অনাদি ক্ষুধার ব্যথা, অনাদি ব্যথার ক্ষুধা ভুলে
নবপ্রাণ, সোনা-রূপা কাঠি তুমি পায়ের পাতায় রাখোনি কো?
আদুরে সদ্যজাত, কত টন দুগ্ধের ভুখো তুমি?
থালায় থালায় আছে রাখা, রঙভেদ শত শত স্তন!
মৃতপাখি, উড্ডীন শ্বাসেরা এখন!
উড্ডীন জীবন এখন!
উড্ডীন নিবারণ প্রসাদের পাতে আছে পাতা
যা তা মতো মৃত্যুর কথা শুনো না কো
একবার, বহুবার প্রেমের কক্ষে তুমি থাকো
বনিকের স্থুল হাতে কামনার ভোঁতা স্বাদ আঁকো
রাখো তুমি সূক্ষ্মতা, ক্ষমা আর নবজীবনের তিতকুট
পাখি পাখি, মায়া পাখি, আনন্দ ছাড়া সব ঝুট!
অটুট বেদনা সব ঝুট!
আমার বিনত করপুট তোমার আয়ুর বর চায়
সুখের, দ্রোহের খায় উগ্র কসম বার বার।
থ্যানাটস
স্থবির বুকের ‘পরে আলো
রুগ্ন বাহুর ‘পরে আলো
পিছলায় আলো দেশ দেশ, নরোম রকম সাত রঙ
প্রভুর ঘৃণার ফাঁকে আলো?
প্রভুর প্রেমের ফাঁকি আলো?
রঙিন ঘোরের আলো নামে, ঘূর্ণন ভেজায় বরফ!
অনেক আগুন কথা আছে
অনেক আগুন একা নাচে
আগুনেরা জল ছুঁয়ে বাঁচে অলৌকিকের দামে চুপ!
কী সব বরফ কথা ভাসে
কী সব মরণ ধীরে জাগে
সকল কাঁপন এঁটে দৃঢ়, আমাদের সব থেমে থাকে
সকল দহন ধ’রে পায়ে, আমাদের হাতগুলো হাঁটে
মদের কসম খেয়ে বলি
মদের রঙের আঁকি ছবি
মাদক সুরের পাশে পাশে
অন্য রকম ছবি বসে, চলচ্চিত্র তরতর…
নয়তো মগজ ধোয়া জলে
নিঃসরণের ফাঁদা কলে
আদিম ক্রুদ্ধ নেশা ফাঁসে, স্বীকার্য বনের নিয়ম।
সেতুর অনেক নিচে আরও
খুলি খুলি চিত্রেরা গাঢ়
এই কালে নিতে হয় ভেবে, ভুল খুব, হয়ে গেছে ভুল
এমন দেয়াল উঠে গেছে
অভেদ্য ঘরমুখো কাঁচে
কাঁচভাঙা কাঁচভাঙা রূপে, ছলকায় অনূঢ়ার চুল।
স্নাত বোধ
এত সুখী হতে নেই মানুষের
এতটা আরাম যদি বসে যায় হাড়ে একবার
ত্বকে বড় মৌলিক অহমিকা ফোটে
আঙুল ডোবালে যেন মাছেরা আসবে উঠে নখ দাঁতে ধরে,
রান্ধন ঘরে গেলে আপনি উঠবে জ্বলে হলুদ আগুন,
বাড়ি থেকে বেরোলেই দাঁড়িয়ে পড়বে যেন
হাসিমুখে রিকশাপুলার,
আইল্যান্ডজুড়ে শুধু ফুটবে ছাতিম,
বাতাবির ফুল থোকা থোকা ঘন হবে শরৎ প্রান্তে এ হাওয়ায় –
বারো বৎসর সেই ঘ্রাণ ঘুমোবে না।
পৃথিবীর বুকে এত থির হতে নেই
যতটা মোহের পাতা খুলে বিহ্বল হতে পারে হৃদয়কিশোর
হতে হয় ঐ টুকু, কেঁদে নিতে হয় কেউ মরে টরে গেলে
কেঁপে ওঠা চাই, যদি গ্রেনেডেরা ফাটে আঙিনায়
এত ঘুম বড় অশালীন, যখন যুদ্ধ করে দানবের বৈধ ট্রিগার।
রাজশাহীতে ৩১ মে ২০২৪ ভাঁটফুলসূত্র আয়োজিত ‘হিরণ্ময় ডানার বিস্তার’ শীর্ষক পাঁচ কবির কবিতাপ্রহরে পঠিত কবিতা।